গুগল তাদের অত্যাধুনিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত ভিডিও নির্মাণ মডেল, ভিয়ো ৩.১ (Veo 3.1) উন্মোচন করেছে, যা ডিজিটাল সৃজনশীলতার ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই প্রযুক্তি পাঠ্য এবং দৃশ্যমান ইনপুট থেকে উচ্চ-রেজোলিউশনের ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম, যেখানে শব্দ, সংলাপ এবং সাউন্ড ইফেক্টগুলির নিখুঁত সমন্বয় ঘটানো সম্ভব হয়েছে। এই মডেলের আগমন শিল্প এবং প্রযুক্তির সংযোগস্থলে এক গভীর পরিবর্তন আনছে।
ভিয়ো ৩.১ মডেলটি বিশেষভাবে কুখ্যাত 'উইল স্মিথ স্প্যাগেটি খাচ্ছেন' পরীক্ষাটিতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে। এই পরীক্ষাটি পূর্বে এআই ভিডিও মডেলগুলির মুখের অভিব্যক্তি এবং নড়াচড়ার সীমাবদ্ধতা উন্মোচন করেছিল, যা ২০২৩ সালে প্রথম দেখা গিয়েছিল। পূর্ববর্তী সংস্করণগুলিতে স্মিথের মুখমণ্ডল বিকৃত এবং নড়াচড়া অস্বাভাবিক লাগলেও, নতুন মডেলে মুখের সূক্ষ্ম অভিব্যক্তি এবং স্প্যাগেটি খাওয়ার শব্দগুলিও নির্ভুলভাবে অনুকরণ করা সম্ভব হয়েছে। এই অগ্রগতি প্রমাণ করে যে এআই এখন মানুষের বাস্তবসম্মত কার্যকলাপের জটিলতা বুঝতে পারছে। তবে, কিছু ব্যবহারকারী লক্ষ্য করেছেন যে সাউন্ড ইফেক্টগুলি এখনও কিছুটা কৃত্রিম শোনাচ্ছে।
এই অভূতপূর্ব উন্নতির মাঝেও, গুগল এআই-জেনারেটেড উপাদানগুলির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা এআই-জেনারেটেড উপাদানগুলিকে চিহ্নিত করার জন্য অদৃশ্য ওয়াটারমার্ক (SynthID) ব্যবহার করছে এবং বিষয়বস্তুতে 'ভিয়ো' লেবেল যুক্ত করছে। গুগল ডিপমাইন্ড দ্বারা তৈরি SynthID প্রযুক্তিটি ডিজিটাল ওয়াটারমার্ক সরাসরি ভিডিওর ফ্রেমে এমনভাবে গেঁথে দেয় যা মানুষের চোখে অদৃশ্য, কিন্তু শনাক্তকরণ প্রযুক্তির মাধ্যমে সনাক্ত করা যায়। এই ব্যবস্থা ডিজিটাল বিশ্বাস পুনরুদ্ধার এবং ভুল তথ্যের বিস্তার রোধে সহায়ক হবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভিয়ো ৩.১ শুধুমাত্র এই চ্যালেঞ্জিং পরীক্ষাটি পাশ করেই থেমে থাকেনি; এটি ভিডিও নির্মাণের ক্ষেত্রে আরও গভীর নিয়ন্ত্রণ এনেছে। এই সংস্করণে রেফারেন্স চিত্র ব্যবহার করে চরিত্র এবং শৈলীর ধারাবাহিকতা বজায় রাখা, ভিডিও ক্লিপগুলিকে দীর্ঘ করা এবং প্রথম ও শেষ ফ্রেম সরবরাহ করে মসৃণ রূপান্তর তৈরি করার মতো উন্নত সৃজনশীল নিয়ন্ত্রণ যুক্ত করা হয়েছে। এই নতুন ক্ষমতাগুলি, বিশেষ করে নেটিভ অডিও তৈরির সঙ্গে মিলিত হয়ে, নির্মাতাদের তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষী সৃজনশীল ধারণাগুলিকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য অভূতপূর্ব সুযোগ করে দিচ্ছে।
এই প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি একদিকে যেমন সৃজনশীল শিল্পে নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করছে, তেমনই অন্যদিকে ডিপফেক এবং বাস্তবতা ও ডিজিটাল সৃষ্টির মধ্যেকার রেখাটি ঝাপসা হয়ে যাওয়া নিয়ে বিতর্ক উস্কে দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, তথ্যের উৎস এবং সত্যতা যাচাই করার গুরুত্ব আরও বেড়েছে। ব্যবহারকারীদের এখন সচেতনভাবে গ্রহণ করা তথ্যের প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, যাতে কেবল স্বচ্ছ এবং যাচাইকৃত উপাদানগুলিই তাদের উপলব্ধির ক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ করতে পারে। এই নতুন সরঞ্জামগুলি সৃজনশীলতা এবং দায়িত্বশীলতার মধ্যে একটি ভারসাম্য স্থাপন করার সুযোগ হিসেবে দেখা উচিত।