বিখ্যাত ব্রিটিশ শিল্পী ডেভিড হকনির একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কাজ, 'ক্রিস্টোফার ইশারউড এবং ডন বাচার্ডি' (Christopher Isherwood and Don Bachardy) আগামী নভেম্বর ২০২৫-এ নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি'স (Christie's) নিলামে উঠতে চলেছে। এই মাস্টারপিসটির আনুমানিক মূল্য ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বলে আশা করা হচ্ছে।
১৯৬৮ সালে আঁকা এই চিত্রকর্মটি হকনির বিখ্যাত ডাবল পোট্রেট সিরিজের প্রথম কাজ এবং এটি শিল্পীর কর্মজীবনের একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হয়। এই চিত্রকর্মটি ইংরেজ ঔপন্যাসিক ক্রিস্টোফার ইশারউড এবং তাঁর সঙ্গী, শিল্পী ডন বাচার্ডির একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তকে ধারণ করে। এটি হকনির অনন্য দৃষ্টিকোণ ও টেক্সচারের মাধ্যমে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে ফুটিয়ে তোলার দক্ষতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শিল্প সমালোচকদের মতে, এটি ১৯৬৮ থেকে ১৯৭৫ সালের মধ্যে হকনির তৈরি করা ডাবল পোট্রেটগুলির মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি।
'ক্রিস্টোফার ইশারউড এবং ডন বাচার্ডি' চিত্রকর্মটি সেই সময়ে আঁকা হয়েছিল যখন হকনি ১৯৬৪ সালে লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে আসেন, যা তাঁর রঙ, বিষয়বস্তু এবং দৃষ্টিভঙ্গির উপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল। পশ্চিম উপকূল তাঁর জন্য আলো এবং অবসরের উৎস হয়ে ওঠে, যা 'এ বিগার স্প্ল্যাশ' (A Bigger Splash) (১৯৬৭) এবং 'পোর্ট্রেট অফ অ্যান আর্টিস্ট (পুল উইথ টু ফিগার্স)' (Portrait of an Artist (Pool with Two Figures)) (১৯৭২) এর মতো আইকনিক কাজগুলিতে প্রতিফলিত হয়েছে।
হকনির ডাবল পোট্রেট সিরিজটি মানব সম্পর্কের অন্তরঙ্গতা এবং পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়াকে অন্বেষণ করার জন্য পরিচিত। এই কাজগুলিতে কেবল বাহ্যিক সাদৃশ্যই নয়, বরং মানুষের মধ্যেকার সূক্ষ্ম বন্ধন, ভাগ করা স্মৃতি এবং মানসিক সংযোগগুলিও চিত্রিত হয়।
'ক্রিস্টোফার ইশারউড এবং ডন বাচার্ডি' ছবিতে, ইশারউডের শান্ত ভঙ্গি এবং বাচার্ডির সরাসরি দৃষ্টির মধ্যে একটি আকর্ষণীয় বৈপরীত্য দেখা যায়, যা দুজনের মধ্যেকার গতিশীল সম্পর্ককে তুলে ধরে। এই চিত্রকর্মটি তাদের সান্তা মনিকার সান-লিট লিভিং রুমে একটি অন্তরঙ্গ মুহূর্তকে ধারণ করেছে, যা হকনির আলোক, স্থান এবং টেক্সচারের উপর অসাধারণ দখলকে প্রকাশ করে।
এই নিলামটি সংগ্রাহকদের জন্য একটি বিরল সুযোগ, কারণ হকনির কাজ, যেমন 'পোর্ট্রেট অফ অ্যান আর্টিস্ট (পুল উইথ টু ফিগার্স)' (Portrait of an Artist (Pool with Two Figures)), অতীতে বিশ্ব নিলামে রেকর্ড মূল্য স্থাপন করেছে। ২০১৮ সালে 'পোর্ট্রেট অফ অ্যান আর্টিস্ট (পুল উইথ টু ফিগার্স)' প্রায় ৯০.৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি হয়েছিল, যা সেই সময়ে একজন জীবিত শিল্পীর কাজের জন্য সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য ছিল। এই নতুন নিলামটি হকনির কাজের প্রতি বাজারের চলমান আগ্রহ এবং তাঁর শৈল্পিক মূল্যের একটি শক্তিশালী প্রমাণ।
শিল্প বাজারের প্রবণতাগুলি ইঙ্গিত দেয় যে সমসাময়িক শিল্পীদের মধ্যে হকনির মতো প্রতিষ্ঠিত এবং প্রভাবশালী শিল্পীদের কাজের চাহিদা ক্রমাগত বাড়ছে, বিশেষ করে যারা তাদের কাজে নতুনত্ব এবং গভীরতা আনতে সক্ষম হয়েছেন। এই চিত্রকর্মটি কেবল একটি শৈল্পিক অর্জনই নয়, এটি দুটি মানুষের মধ্যেকার সম্পর্ক এবং সময়ের সাথে সাথে তাদের ব্যক্তিগত যাত্রার একটি প্রতিচ্ছবিও বটে। হকনির এই কাজগুলি কেবল নান্দনিকতাই নয়, বরং মানব অস্তিত্বের গভীরতর দিকগুলিকেও স্পর্শ করে, যা এটিকে শিল্প সংগ্রাহকদের কাছে অত্যন্ত মূল্যবান করে তোলে। এই নিলামের মাধ্যমে, শিল্পপ্রেমীরা হকনির কর্মজীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের অংশীদার হওয়ার এবং একটি কালজয়ী শিল্পকর্মের মালিক হওয়ার সুযোগ পাবেন।