রোমের প্রায় দুই হাজার বছরের পুরোনো কলোসিয়ামের গভীরে লুকিয়ে থাকা এক ঐতিহাসিক সংযোগপথ জনসাধারণের জন্য উন্মোচিত হয়েছে, যা প্রাচীন রোমান সম্রাটদের ভিড় এড়িয়ে চলার এক বিশেষ সুযোগ দিত। এই গোপন সুড়ঙ্গ, যা 'কমোডাসের পথ' (Passage of Commodus) নামে পরিচিত, প্রথম ও দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি সম্রাট ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সরাসরি তাদের বিশেষ আসনে পৌঁছানোর পথ হিসেবে ব্যবহৃত হতো, যাতে তারা সাধারণ মানুষের ভিড়ে মিশে না যান। দীর্ঘ ও নিবিড় পুনরুদ্ধারের পর এই অসাধারণ পথটি তার হারানো জৌলুস ফিরে পেয়েছে।
পুনরুদ্ধারকারীরা এমন কিছু বিস্ময়কর বিবরণ আবিষ্কার করেছেন যা সময়ের ধুলো এবং জলীয় ক্ষতির কারণে এতদিন আড়ালে ছিল। এই সুড়ঙ্গের দেয়ালে মার্বেল আস্তরণের চিহ্ন পাওয়া গেছে, যা পৌরাণিক দৃশ্য এবং প্রাচীন ক্রীড়ানুষ্ঠানের চিত্রকর্ম দ্বারা সজ্জিত ছিল। বিশেষত, ভল্টের উপরে ডায়োনিসাস ও এরিয়াদনির পৌরাণিক কাহিনীর চিত্রকর্মের স্টাকো অবশিষ্ট রয়েছে। প্রবেশদ্বারে বন্য শূকর শিকার, ভালুকের লড়াই এবং অ্যাক্রোবেটিক বিনোদনের দৃশ্য খোদাই করা রয়েছে, যা অঙ্গনে অনুষ্ঠিত নৃশংস বিনোদনের এক উপযুক্ত পূর্বাভাস দিত। ধারণা করা হয়, সম্রাট কমোডাস এই সুড়ঙ্গ দিয়ে যাওয়ার সময় একটি গুপ্তহত্যার প্রচেষ্টা থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
ফ্ল্যাভিয়ান অ্যাম্ফিথিয়েটারের ভিত্তি খনন করে নির্মিত এই সুড়ঙ্গটি একটি 'এস' আকৃতির এবং এর মধ্যে প্রাকৃতিক আলো প্রবেশের জন্য ছোট ছোট স্কাইলাইট ছিল। পুনরুদ্ধার কাজের মধ্যে কাঠামোগত সংরক্ষণ, আলংকারিক স্টাকো এবং প্লাস্টারের পুনরুদ্ধার এবং একটি নতুন হাঁটার পথের স্থাপন অন্তর্ভুক্ত ছিল, যা ২০২৪ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলে। এছাড়াও, একটি নতুন আলোকসজ্জা ব্যবস্থা স্থাপন করা হয়েছে যা স্কাইলাইট দিয়ে আসা প্রাকৃতিক আলোর অনুকরণ করে, এবং ডিজিটাল পুনর্গঠন দর্শকদের মূল সজ্জার চিত্র কল্পনা করতে সাহায্য করে। যদিও সুড়ঙ্গটি কলোসিয়ামের বাইরে পূর্ব দিকে প্রসারিত হয়েছে, এর চূড়ান্ত গন্তব্য এখনও রহস্যে আবৃত, তবে ধারণা করা হয় এটি গ্ল্যাডিয়েটরদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র লুডাস ম্যাগনাস পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।
ইতিহাসের এই বিশেষ অধ্যায়টি এখন সকলের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। আগামী ২০২৫ সালের ২৭শে অক্টোবর থেকে, দর্শনার্থীরা 'ফুল এক্সপেরিয়েন্স' টিকিটের মাধ্যমে এই ঐতিহাসিক রুটে হেঁটে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এই উদ্যোগটি কেবল পর্যটকদের প্রবাহকে বৈচিত্র্যময় করবে না, বরং স্থাপত্যের এমন বিবরণ উন্মোচন করবে যা এতদিন কেবল বিশেষজ্ঞদের নখদর্পণে ছিল। এই উন্মোচন প্রাচীন সংরক্ষণের সাথে আধুনিক প্রবেশাধিকারের এক চমৎকার সমন্বয় সাধন করেছে, যা শাসকবর্গের দৃষ্টিকোণ থেকে কলোসিয়ামকে অনুভব করার এক অনন্য সুযোগ এনে দিয়েছে।