পোল্যান্ডের ১৩শ শতাব্দীর ভূগর্ভস্থ ঐতিহ্য: ভেলিকা সল্ট মাইন

সম্পাদনা করেছেন: Irina Davgaleva

ভেলিকা সল্ট মাইন (Wieliczka Salt Mine), যা ক্রাকো (Krakow) শহর থেকে মাত্র বারো কিলোমিটার (১২ কিমি) দূরে অবস্থিত, সম্পূর্ণরূপে লবণ দ্বারা খোদাই করা এক অনন্য ভূগর্ভস্থ জগৎ। এটি বিশ্বের প্রাচীনতম সক্রিয় লবণ খনিগুলির মধ্যে অন্যতম, যার ইতিহাস ত্রয়োদশ শতাব্দী (XIII শতাব্দী) থেকে শুরু হয়। এর গভীর ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক গুরুত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ, ১৯৭৮ সালে এই অবিশ্বাস্য স্থানটি ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়। মধ্যযুগে, লবণকে 'শ্বেত সোনা' (White Gold) নামে অভিহিত করা হত এবং এটি পোল্যান্ডের রাজকীয় কোষাগারের আয়ের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ (১/৩) সরবরাহ করত, যা রাষ্ট্রের সমৃদ্ধির ভিত্তি স্থাপন করেছিল।

ক্রাকো থেকে এই ভূগর্ভস্থ সম্পদে পৌঁছানোর জন্য বেশ কয়েকটি সুবিধাজনক উপায় রয়েছে। দ্রুততম বিকল্পটি হলো ক্রাকো-গ্লুভনি (Krakow-Glowny) স্টেশন থেকে ভেলিকা (Wieliczka) স্টেশন পর্যন্ত ট্রেন যাত্রা। এই রেলপথে প্রায় ২৫ মিনিট সময় লাগে, যার পরে প্রবেশদ্বার পর্যন্ত পাঁচ মিনিটের (৫ মিনিট) হাঁটা পথ। আরেকটি বিকল্প হলো ৩০৪ নম্বর বাস, যা ডভোরজেক-গ্লুভনি-জাখুদ (Dworzec-Glowny-Zakhud) এলাকা থেকে ছেড়ে যায় এবং গন্তব্যে পৌঁছাতে প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় নেয়। যারা দ্রুত স্থানান্তর চান, তাদের জন্য ট্যাক্সি বা উবার/বোল্টের মতো পরিষেবাগুলি উপলব্ধ; ক্রাকোর কেন্দ্র থেকে এই যাত্রাটি সাধারণত ২৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যে সম্পন্ন হয়।

খনিটি প্রতিদিন পরিদর্শনের জন্য খোলা থাকে। যদিও মূল তথ্যে কাজের সময় সকাল ৮:৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬:৩০ (১৮:৩০) পর্যন্ত উল্লেখ ছিল, তবে বর্তমান তথ্য অনুযায়ী ঋতুভেদে সময় পরিবর্তিত হতে পারে। গ্রীষ্মকালে এটি সন্ধ্যা ৭:৩০ (১৯:৩০) পর্যন্ত খোলা থাকে এবং শীতকালে বিকাল ৫:০০ (১৭:০০) পর্যন্ত খোলা থাকে। ভিড় এড়াতে টিকিট অনলাইনে কেনার জন্য দৃঢ়ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়। স্ট্যান্ডার্ড ট্যুরিস্ট রুটের জন্য একজন প্রাপ্তবয়স্কের টিকিটের মূল্য প্রায় ১৪৩ পোলিশ জ্লোটি (যা প্রায় ৩৬ মার্কিন ডলারের সমতুল্য)।

প্রধান ট্যুরিস্ট রুটটি সবচেয়ে জনপ্রিয়, যেখানে বিশটিরও বেশি (২০+) কক্ষ এবং তিন কিলোমিটার (৩ কিমি) ভূগর্ভস্থ করিডোর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যা ১৩৫ মিটার গভীরতা পর্যন্ত নেমে গেছে। খনি শ্রমিকদের কাজ সম্পর্কে আরও বাস্তব ধারণা পেতে, মাইনার্স রুট (Miner’s Route) নামে একটি গভীরতর পথ রয়েছে, যেখানে দর্শনার্থীরা একজন গ্রুপ নেতার তত্ত্বাবধানে ব্যবহারিক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে। এই খনির সুড়ঙ্গগুলির মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত, যা নয়টি (৯) স্তর জুড়ে রয়েছে, এবং এর গভীরতম বিন্দুটি ৩২৭ মিটার নিচে অবস্থিত—যা আইফেল টাওয়ারের উচ্চতাকেও ছাড়িয়ে যায়।

খনিটির ভূগর্ভস্থ জগৎ বেশ কিছু অনন্য বৈশিষ্ট্যে ভরপুর। ১২৫ মিটার গভীরতায় 'কার্চমা গুর্নিচা' (Karczma Gornicza) নামে একটি রেস্তোরাঁ রয়েছে, যেখানে ঐতিহ্যবাহী পোলিশ খাবার পরিবেশন করা হয়। এই কমপ্লেক্সের রত্ন নিঃসন্দেহে সেন্ট কিংগার চ্যাপেল (Chapel of St. Kinga), যা সম্পূর্ণরূপে লবণ থেকে খোদাই করা হয়েছে। এটি তৈরি করতে ৩০ বছরেরও বেশি সময় লেগেছিল এবং ২০,০০০ টন শিলা লবণ ব্যবহার করা হয়েছিল। খনির অভ্যন্তরের জলবায়ু সারা বছর স্থিতিশীল থাকে, তাপমাত্রা ১৬°C থেকে ১৮°C এর মধ্যে ওঠানামা করে। এটি বছরের যেকোনো সময়ে একটি আদর্শ আশ্রয়স্থল হলেও, হালকা জ্যাকেট বা সোয়েটার সাথে রাখা বুদ্ধিমানের কাজ।

উৎসসমূহ

  • Lifestyle.bg

  • How to Visit Wieliczka Salt Mine – Plan Your Visit

  • Visit Wieliczka Salt Mine | Timings, Location, Facilities & More

  • Wieliczka Salt Mines |The Beautiful Underground City in Europe

  • Wieliczka Salt Mine: What you need to know before visiting (2025)

  • Wieliczka Salt Mine: A Visitor Guide!

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।