ইতালির রেলওয়ে আপগ্রেড ইউরোপের পরিবহন ব্যবস্থাকে নতুন রূপ দিচ্ছে

সম্পাদনা করেছেন: Irina Davgaleva

ইউরোপের পরিবহন ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে ইতালি। দেশটির সড়ক যানজট কমাতে এবং পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলার লক্ষ্যে রেল সংযোগের ব্যাপক উন্নয়ন করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের মধ্যে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের কাজ অনেকটাই এগিয়ে যাবে, যার মধ্যে কিছু প্রকল্প চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

আল্পস পর্বতমালার নিচে নির্মিত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ব্রেনার বেস টানেল অস্ট্রিয়া ও ইতালিকে সংযুক্ত করবে। এটি চালু হলে ভেরোনা ও মিউনিখের মধ্যে ভ্রমণের সময় ৪০% কমে যাবে, যা মাত্র তিন ঘণ্টায় নামিয়ে আনবে। এই প্রকৌশল বিস্ময় উত্তর-দক্ষিণ ইউরোপীয় রেল যোগাযোগে বিপ্লব ঘটাবে। অন্যদিকে, ৬৫ কিলোমিটার দীর্ঘ লিওঁ-তুরিন হাই-স্পিড রেল টানেল ফ্রান্স ও ইতালিকে সংযুক্ত করবে। এই গুরুত্বপূর্ণ সংযোগটি প্যারিস-মিলান ভ্রমণের সময় প্রায় ৩০% কমিয়ে আনবে, যা প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টায় নিয়ে আসবে। নির্মাণ কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে এবং এটি ২০৩৩ সালে শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

জেনোয়া-মিলান হাই-স্পিড রেল লাইন, যা ৫৩ কিলোমিটার দীর্ঘ, তার প্রায় ৯০% কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এই প্রকল্পটি জেনোয়া ও মিলানের মধ্যে ভ্রমণের সময় দেড় ঘণ্টার বেশি থেকে কমিয়ে এক ঘণ্টায় নিয়ে আসবে। ২০২৬ সালের মধ্যে এটি সম্পূর্ণরূপে চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা উত্তর ইতালির যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করবে।

আরও একটি উল্লেখযোগ্য প্রকল্প হলো মেসিনা প্রণালী সেতু, যা মূল ভূখণ্ড ইতালি এবং সিসিলিকে ঐতিহাসিক ভাবে সংযুক্ত করবে। এই সেতুটি সড়ক ও রেল উভয় প্রকার যান চলাচলের জন্য নির্মিত হচ্ছে, যা সংযোগ ব্যবস্থাকে উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করবে। ২০৩২ সাল নাগাদ এই সেতুটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই বৃহৎ পরিকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পগুলি ইউরোপীয় পর্যটন ও লজিস্টিকসের উপর গভীর প্রভাব ফেলবে। ভ্রমণের সময় নাটকীয়ভাবে কমে যাওয়ায় আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আকর্ষণ বাড়বে, এবং উন্নত মালবাহী পথগুলি মহাদেশ জুড়ে অর্থনৈতিক কার্যকারিতা বৃদ্ধি করবে। এই প্রকল্পগুলিতে ইতালির প্রতিশ্রুতি ইউরোপের পরিবহন নেটওয়ার্কের অগ্রগতি এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধিতে দেশটির অবস্থানকে আরও সুদৃঢ় করবে।

বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, ব্রেনার বেস টানেলের পশ্চিম মূল সুড়ঙ্গ খননের কাজ শেষ হয়েছে এবং এটি আল্পসের নিচ দিয়ে অস্ট্রিয়া ও ইতালির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ স্থাপন করবে। এই প্রকল্পটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের টেকসই গতিশীলতা এবং পরিবেশগত প্রভাব কমাতে সহায়ক হবে। মেসিনা প্রণালী সেতু, যা বিশ্বের দীর্ঘতম সাসপেনশন সেতু হতে চলেছে, এটি সিসিলিকে মূল ভূখণ্ডের সাথে যুক্ত করবে। প্রায় ১৫.৫ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পটি দক্ষিণ ইতালির উন্নয়নে একটি অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে এবং ২০৩২ সালের মধ্যে এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই সব প্রকল্পগুলি ইউরোপের পরিবহন ব্যবস্থায় এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে, যা কেবল ভ্রমণের সময়ই কমাবে না, বরং অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও পরিবেশ সুরক্ষাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

উৎসসমূহ

  • Travel And Tour World

  • The Washington Post

  • International Railway Journal

  • Italferr

  • GeoDrilling International

  • TrasportoEuropa

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।