চীনের গুইঝৌ প্রদেশে বিশ্বের সর্বোচ্চ সেতু হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ৬২৫ মিটার উচ্চতায় বেইপান নদীর উপর নির্মিত এই সেতুটি পূর্বের রেকর্ডধারী ফ্রান্সের মিলো ভায়াডাক্টকে ছাড়িয়ে গেছে এবং এটি নির্মাণ প্রকৌশলের এক অসাধারণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই বিশাল সেতুটি তৈরি করতে প্রকৌশলীরা দুর্গম ভূখণ্ডে টাওয়ারিং পাইলন এবং দীর্ঘ ডেক ব্যবহার করে সাসপেনশন ডিজাইন গ্রহণ করেছেন।
বাতাসের তীব্রতা এবং তাপমাত্রার পরিবর্তন সহ্য করার জন্য উন্নত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা যুক্ত করা হয়েছে এবং কঠোর লোড পরীক্ষা এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে। এই সেতুটি স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য ভ্রমণ সময় নাটকীয়ভাবে কমিয়ে এনেছে, যা পূর্বে দুই ঘণ্টার পথ এখন মাত্র এক মিনিটে অতিক্রম করা সম্ভব। এর ফলে অর্থনৈতিক সুযোগ বৃদ্ধি পাবে এবং বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলো সংযুক্ত হবে।
শুধুমাত্র একটি পরিবহন পথ হিসেবেই নয়, এই সেতুটি একটি পর্যটন আকর্ষণ হিসেবেও তৈরি করা হয়েছে। এতে কাঁচের তলার পথ, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার এবং ভিউয়িং ডেক রয়েছে। এছাড়াও ক্যাফে এবং স্টারগেজিং বারের মতো সুযোগ-সুবিধা এটিকে একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও পরিচিতি দেবে। হুয়াজিয়াং গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন ব্রিজটি কেবল একটি প্রকৌশল বিস্ময়ই নয়, এটি গুইঝৌ প্রদেশের রূপান্তরের প্রতীক।
সেতুটি নির্মাণে প্রায় ২৮০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (প্রায় ২ বিলিয়ন ইউয়ান) ব্যয় হয়েছে এবং এটি ২,৮৯০ মিটার দীর্ঘ, যার প্রধান স্প্যান ১,৪২০ মিটার। এটি কেবল উচ্চতম সেতুই নয়, এটি পার্বত্য অঞ্চলে নির্মিত বৃহত্তম স্প্যান ব্রিজও। এই সেতুটি নির্মাণের কাজ ২০২২ সালের শুরুতে শুরু হয়েছিল এবং এটি তৈরিতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যেমন চীনের বেইডু স্যাটেলাইট পজিশনিং সিস্টেম, ড্রোন, বিল্ডিং ইনফরমেশন মডেলিং (বিআইএম) এবং স্মার্ট সেন্সর।
২০২৩ সালের আগস্ট মাসে একটি কঠোর লোড পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে, যেখানে ৯৬টি ট্রাক (প্রায় ৩,৩০০ টন) সেতুর উপর দিয়ে চালিত করে এর স্থিতিশীলতা পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষা সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পরেই সেতুটি জনসাধারণের জন্য খোলার অনুমতি পায়। পর্যটকদের জন্য, এই সেতুটি একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে। কাঁচের তলার পথ থেকে নিচের উপত্যকার মনোরম দৃশ্য দেখা যাবে, যা এক রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা দেবে। ধারণা করা হচ্ছে, প্রতি বছর এই সেতু এবং এর আশেপাশের পর্যটন অঞ্চলটি ১০ লক্ষেরও বেশি দর্শনার্থীকে আকর্ষণ করবে।
এই সেতুটি কেবল একটি স্থাপত্যের নিদর্শনই নয়, এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এবং পর্যটন শিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে সহায়ক হবে। এটি গুইঝৌ প্রদেশের বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলোকে সংযুক্ত করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।