ঐতিহাসিক সফর: রাজা চার্লস তৃতীয় এবং পোপ লিও চতুর্দশের ভ্যাটিকানে ঐক্যমূলক ধর্মীয় পরিষেবা

সম্পাদনা করেছেন: Irina Davgaleva

ভ্যাটিকানের পবিত্র প্রাঙ্গণে ২০২৫ সালের ২৩ অক্টোবর একটি যুগান্তকারী ঘটনা ঘটে, যা চার্চ অফ ইংল্যান্ড এবং ক্যাথলিক চার্চের সম্পর্কের ক্ষেত্রে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করে। চার্চ অফ ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ শাসক হিসেবে রাজা চার্লস তৃতীয় এবং পোপ লিও চতুর্দশ সিস্টিন চ্যাপেলে একটি যৌথ আন্তঃধর্মীয় উপাসনায় অংশ নেন। ধর্মসংস্কারের যুগের পর পাঁচ শতাব্দীরও বেশি সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ রাজতন্ত্রের প্রধান এবং ক্যাথলিক পন্টিফের মধ্যে এটিই ছিল প্রথম প্রকাশ্যে উপাসনার দৃষ্টান্ত। এই ঐতিহাসিক মুহূর্তটি দুই প্রধান খ্রিস্টান শাখার মধ্যে দীর্ঘদিনের বিভেদ ঘুচিয়ে ঐক্যের পথে এগিয়ে যাওয়ার এক সুস্পষ্ট বার্তা বহন করে।

সিস্টিন চ্যাপেলের অভ্যন্তরের পরিবেশ ছিল গভীর প্রতীকী। সেখানে রাজকীয় এবং ভ্যাটিকানের গায়কদল—যার মধ্যে সেন্ট জর্জ চ্যাপেল এবং হিজ ম্যাজেস্টি'স চ্যাপেল রয়্যালের গায়কদল অন্তর্ভুক্ত ছিল—একসাথে সুর মিলিয়েছিল। এটি ঐতিহাসিক দূরত্ব অতিক্রম করে সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠার আকাঙ্ক্ষার এক দৃশ্যমান প্রতীক হিসেবে কাজ করে। যদিও এই বৈঠকটি প্রাথমিকভাবে এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল, তবে তা পিছিয়ে যাওয়ায় এই মুহূর্তের গুরুত্ব আরও গভীরভাবে অনুধাবন করার সুযোগ পাওয়া যায়। পোপ লিও চতুর্দশ, যিনি মে ২০২৫ সালে নির্বাচিত হন এবং প্রথম আমেরিকান পন্টিফ হিসেবে পরিচিত, তিনি এবং রাজা চার্লস তৃতীয় উভয়েই দেখিয়েছেন যে আধুনিক বিশ্বের সাধারণ চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবিলা করার জন্য সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন।

আধ্যাত্মিক আলোচনার পাশাপাশি, দুই নেতা বৈশ্বিক বিষয়গুলিতেও মনোযোগ দেন। বিশেষত, তারা পরিবেশগত স্থিতিশীলতা এবং সৃষ্টির প্রতি যত্নশীল হওয়ার নীতিগুলির প্রতি তাদের পারস্পরিক অঙ্গীকারের ওপর জোর দেন। এই গুরুত্বপূর্ণ পরিবেশ-সংরক্ষণ আলোচনাটি ব্যক্তিগত সাক্ষাতের পরে অ্যাপোস্টলিক প্যালেসের রেগিয়া হলে অনুষ্ঠিত হয়। আন্তঃধর্মীয় সংলাপে রাজার প্রচেষ্টার স্বীকৃতিস্বরূপ, রাজা চার্লস তৃতীয়কে ভ্যাটিকানের দেয়ালের বাইরে অবস্থিত সেন্ট পল ব্যাসিলিকায় “রয়্যাল কনফ্রাটার” (Royal Confrater) উপাধিতে ভূষিত করা হয়। পোপ লিও চতুর্দশ কর্তৃক অনুমোদিত এই সম্মাননাটি আতিথেয়তা এবং ঐক্যমূলক গ্রহণযোগ্যতার প্রকাশ, যা রোমের সাথে ইংল্যান্ডের স্যাক্সন শাসকদের ঐতিহাসিক সম্পর্কের দিকেও ইঙ্গিত করে।

এই ব্যাসিলিকায় রাজা এবং তাঁর উত্তরাধিকারীদের সম্মানে একটি বিশেষ আসন প্রস্তুত করা হয়েছিল, যা “ut unum sint” (“যেন তারা এক হয়”)—এই ল্যাটিন নীতিবাক্য দ্বারা সজ্জিত ছিল। ক্যাথলিক চার্চের জুবিলি বর্ষ উদযাপনের আবহে এই ঘটনাটি ঘটছে। রাজকীয় দম্পতি ২২ অক্টোবর, অর্থাৎ উপাসনার ঠিক আগের দিন, রোমে পৌঁছান। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই যৌথ প্রার্থনা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল, যা সংলাপের স্বচ্ছতা সম্পর্কে একটি জোরালো বিবৃতি দেয়। এই পুরো প্রক্রিয়াটি প্রমাণ করে যে ধর্মীয় নেতারা ঐক্যের মাধ্যমে বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে প্রস্তুত এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি ইতিবাচক বার্তা স্থাপন করতে বদ্ধপরিকর।

উৎসসমূহ

  • The Straits Times

  • King Charles and Pope Leo will pray together in the Sistine Chapel, officials say. Here's why it's historic.

  • King Charles joins Pope Leo in historic Sistine Chapel prayer

  • King Charles becomes first British monarch to pray with pope in five centuries

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।