সিয়ামিজ বিড়াল: ইতিহাস, বৈশিষ্ট্য ও যত্ন

সম্পাদনা করেছেন: Екатерина С.

সিয়ামিজ বিড়াল, যা বিশ্বের অন্যতম প্রাচীন এবং আদরের একটি গৃহপালিত প্রজাতি, তার ইতিহাস কয়েক শতাব্দী পুরনো। এর উৎপত্তি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন সিয়াম (বর্তমান থাইল্যান্ড) থেকে। এই মার্জিত বিড়ালগুলি তাদের ছিপছিপে গড়ন, উজ্জ্বল নীল চোখ এবং স্বতন্ত্র কালারপয়েন্ট প্যাটার্নের জন্য পরিচিত। ঐতিহাসিক সূত্রমতে, প্রায় ১৩৫০ সালের প্রাচীন সিয়ামের রাজধানী আয়ুথায়ার পান্ডুলিপিতে সিয়ামিজ বিড়ালের উল্লেখ পাওয়া যায়। কথিত আছে, এরা রাজকীয় পরিবারের সদস্য এবং পবিত্র বৌদ্ধ মন্দিরের রক্ষক হিসেবে বিবেচিত হত, যা তাদের বিশেষ মর্যাদা দিত।

১৮০০ সালের শেষের দিকে, বিশেষ করে ১৮৭১ সালে ব্রিটেনে এবং ১৮৭৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এদের প্রথম আগমন ঘটে, যা বিশ্বজুড়ে এদের পরিচিতি লাভে সহায়তা করে। আন্তর্জাতিক সংস্থা যেমন ক্যাট ফেন্সিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (CFA) ১৯০৬ সালে সিয়ামিজ প্রজাতিকে স্বীকৃতি দেয় এবং প্রাথমিকভাবে শুধুমাত্র সীল পয়েন্ট রঙ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে ব্লু পয়েন্ট (১৯৩৪), চকোলেট পয়েন্ট (১৯৫২) এবং লিলাক পয়েন্ট (১৯৫৫) রঙগুলো যুক্ত হয়। দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্যাট অ্যাসোসিয়েশন (TICA) ১৯৭৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর রেড পয়েন্ট, ক্রিম পয়েন্ট, সিনামন পয়েন্ট, ফন পয়েন্ট, লিনক্স পয়েন্ট, টরটি পয়েন্ট, সিলভার ট্যাবি এবং স্মোক পয়েন্টের মতো আরও বিস্তৃত রঙ ও প্যাটার্ন গ্রহণ করেছে, যা প্রজাতির মধ্যে জেনেটিক ও নান্দনিক বৈচিত্র্য এনেছে।

সিয়ামিজ বিড়ালদের কালারপয়েন্ট প্যাটার্ন একটি বিশেষ তাপমাত্রা-সংবেদনশীল এনজাইমের ক্রিয়ার ফল। এই এনজাইম শরীরের শীতল অংশে (যেমন কান, মুখ, পা ও লেজ) মেলানিন উৎপাদন বৃদ্ধি করে, ফলে এই অংশগুলোতে গাঢ় রঙ দেখা যায়, যেখানে শরীরের উষ্ণ অংশগুলো হালকা থাকে। এই বৈপরীত্য এবং তাদের গভীর নীল চোখই এদের প্রধান আকর্ষণ।

সিয়ামিজ বিড়ালরা অত্যন্ত বুদ্ধিমান, কৌতূহলী এবং যোগাযোগে পারদর্শী। তাদের স্বতন্ত্র ডাক বা "মিউ" (meow) প্রায়শই মানুষের সাথে কথোপকথনরত বলে মনে হয়, এই কারণে এদের 'মিজার' (meezer) নামেও ডাকা হয়। এরা অত্যন্ত স্নেহপ্রবণ, বিশ্বস্ত এবং সামাজিক, যা এদের পরিবার ও অন্যান্য পোষা প্রাণীর সাথে ভালোভাবে মিশতে সাহায্য করে। তবে, এরা মানুষের সঙ্গ খুব পছন্দ করে এবং দীর্ঘক্ষণ একা থাকলে বিষণ্ণ বা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠতে পারে, তাই এদের জন্য সঙ্গী রাখা বা বাড়িতে কারো উপস্থিতি জরুরি।

স্বাস্থ্যগতভাবে, সিয়ামিজ বিড়ালরা সাধারণত স্বাস্থ্যকর হলেও কিছু বংশগত প্রবণতা দেখা যায়। এদের মধ্যে অ্যামাইলয়েডোসিস (লিভার ও কিডনিতে প্রোটিন জমা হওয়া), হাইপারট্রফিক কার্ডিওমায়োপ্যাথি (হৃদপিণ্ডের পেশী অস্বাভাবিকভাবে পুরু হওয়া), এবং প্রগ্রেসিভ রেটিনাল অ্যাট্রোফি (চোখের রোগ যা ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে ঠেলে দেয়) অন্যতম। এছাড়াও, অ্যাজমা এবং কিছু নির্দিষ্ট ক্যান্সারের প্রতি এদের সংবেদনশীলতা দেখা যেতে পারে। সঠিক পুষ্টি, ব্যায়াম, নিয়মিত পশুচিকিৎসা এবং প্রচুর স্নেহ পেলে এরা দীর্ঘ জীবন লাভ করে থাকে, যা গড়ে ১৩-১৫ বছর হলেও, অনেক ক্ষেত্রে ২০ বছর বা তারও বেশি হতে পারে। সর্বোপরি, সিয়ামিজ বিড়াল তাদের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, বুদ্ধিদীপ্ত আচরণ এবং সমৃদ্ধ ইতিহাসের কারণে আজও বিশ্বজুড়ে মানুষের মন জয় করে চলেছে।

উৎসসমূহ

  • PetsCats.ro

  • Pisica siameză - Toate Animalele

  • Pisica siameză: ghid de îngrijire. Prezentarea generală a rasei - Animal Zoo

  • Pisica siameză. Caracteristici | Advance Affinity

  • Ghid complet pentru viitorii proprietari de pisici siameze – GHID VETERINAR

  • Pisicile siameze se nasc albe: cum își schimbă culoarea blănii în timp. Genetica fascinantă a acestei rase

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।