বিড়ালের প্রতি মানুষের ভালোবাসা কেবল একটি মানসিক টান নয়, বরং এটি এক গভীর ঐতিহাসিক বন্ধনের প্রতিফলন। প্রায় ৯,৫০০ বছর আগে থেকে এই মন মুগ্ধকর প্রাণীদের সাথে আমাদের মিথস্ক্রিয়া শুরু হয়েছিল এবং তখন থেকেই বিড়াল মানুষের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। মনোবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, বিড়ালের সাথে সময় কাটালে তা মানসিক চাপ কমাতে, মানসিক সুস্থতা বাড়াতে এবং এমনকি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে। তবে, পোষা প্রাণীর প্রতি আমাদের এই ভালোবাসা যেন আমাদের মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে খেয়াল রাখা জরুরি। আমাদের সামাজিক পরিমণ্ডলে একটি ভারসাম্য বজায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
এনআইইউ এইচএসই (NIU HSE)-এর মনোবিজ্ঞানীরা এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, পোষা প্রাণীর প্রতি গভীর টান থাকলে তা প্রকৃতির প্রতি এবং অন্যান্য মানুষের প্রতি আমাদের মনোভাবকেও প্রভাবিত করে। গবেষণায় দেখা গেছে, পোষা প্রাণীর সাথে যত বেশি আনন্দ পাওয়া যায়, মানুষের প্রতি সাহায্য করার ইচ্ছাও তত বাড়ে। তবে, প্রাণীদের প্রতি ভালোবাসা সবসময় প্রকৃতির প্রতি উদ্বেগের সঙ্গে যুক্ত নাও থাকতে পারে। এইভাবেই, বিড়ালের প্রতি ভালোবাসা এক বিশেষ, নীরব অথচ অত্যন্ত শক্তিশালী বন্ধন তৈরি করে, যা একজন মানুষকে 'বিড়াল-প্রেমী' হিসেবে পরিচিতি দেয়।
ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, প্রায় ১০,০০০ থেকে ১২,০০০ বছর আগে উর্বর চন্দ্রকলা (Fertile Crescent) অঞ্চলে কৃষিকাজের সূত্রপাতের সাথে সাথে বিড়াল ও মানুষের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। মানুষ যখন কৃষিকাজ শুরু করে এবং শস্য সংরক্ষণ করতে শুরু করে, তখন ইঁদুরের উপদ্রব বাড়তে থাকে। বিড়াল, যারা ইঁদুরের প্রাকৃতিক শিকারী, তারা খাদ্যের সন্ধানে মানুষের বসতির দিকে আকৃষ্ট হয়। এই পারস্পরিক সুবিধা থেকেই বিড়াল ও মানুষের মধ্যে একটি সহাবস্থান তৈরি হয়। প্রাচীন মিশরীয়রা বিড়ালদের অত্যন্ত পবিত্র মনে করত এবং দেবীরূপে পূজা করত। এমনকি বিড়াল হত্যা করাও সেখানে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ ছিল।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, বিড়ালের সান্নিধ্য মানুষের মস্তিষ্কের উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, মেজাজ ভালো রাখে এবং মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে অবদান রাখে। বিড়ালের সাথে মিথস্ক্রিয়া কর্টিসল (স্ট্রেস হরমোন) কমাতে সাহায্য করে এবং অক্সিটোসিন (ভালোবাসার হরমোন) নিঃসরণ বাড়ায়, যা মানসিক শান্তি ও বন্ধন দৃঢ় করতে সহায়ক। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, যারা পোষা প্রাণী, বিশেষ করে বিড়াল বা কুকুরের সাথে বড় হয়, তাদের মধ্যে অন্যের প্রতি সহানুভূতি (empathy) বেশি দেখা যায়। এই সহানুভূতি কেবল প্রাণীদের প্রতিই নয়, বরং মানুষের প্রতিও প্রসারিত হয়, যা সামাজিক সম্পর্ক উন্নত করতে সাহায্য করে। বিড়ালের যত্ন নেওয়া এবং তাদের আবেগ বোঝার চেষ্টা করা আমাদের অন্যের প্রতি আরও সংবেদনশীল করে তোলে। সুতরাং, বিড়াল কেবল একটি পোষা প্রাণী নয়, বরং তারা আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা আমাদের মানসিক শান্তি, সামাজিক দক্ষতা এবং সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।