বিড়াল কেন চৌকো জায়গায় বসতে ভালোবাসে: আচরণের গভীরে

সম্পাদনা করেছেন: Екатерина С.

বিড়ালদের মেঝেতে আঁকা চৌকো জায়গায় বসে থাকার এক অদ্ভুত অভ্যাস রয়েছে, যা সম্প্রতি অনেক গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। জীববিজ্ঞানী জুলিয়া মিহাটশ এই আচরণের একটি সম্ভাব্য ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি মনে করেন, বিড়ালরা তাদের পারিপার্শ্বিক পরিবেশের গঠন এবং বৈপরীত্যের মাধ্যমে নিজেদের পথ খুঁজে নেয়। একটি চিহ্নিত চৌকো তাদের কাছে মেঝে থেকে স্পষ্টতই আলাদা একটি জোন হিসেবে প্রতিভাত হয়। যেহেতু বিড়ালরা রঙের চেয়ে বৈপরীত্য এবং নড়াচড়ার প্রতি বেশি সংবেদনশীল, তাই এই চিহ্নিত স্থানগুলো তাদের আকর্ষণ করে।

বিড়ালদের স্বভাবগতভাবে নিরাপদ এবং উঁচু স্থান খোঁজার প্রবণতা রয়েছে। প্রকৃতিতে তারা ঝোপঝাড় বা দেয়ালের কিনারা পছন্দ করে, যা তাদের নিরাপত্তা দেয় এবং চারপাশের পরিবেশ পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দেয়। যদিও মেঝেতে আঁকা একটি চৌকো তাদের শারীরিক সুরক্ষা দেয় না, তবুও এটি তাদের এই সহজাত প্রবৃত্তিকে জাগিয়ে তুলতে পারে এবং সেখানে বসতে উৎসাহিত করতে পারে। এছাড়াও, তাপমাত্রা একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিড়ালরা প্রায়শই তাদের শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের জন্য শীতল স্থান খোঁজে। মসৃণ এবং কঠিন পৃষ্ঠ, যেমন কংক্রিটের টাইলস, ঠান্ডা ধরে রাখে, যা গরমের দিনে বিড়ালদের জন্য বিশেষভাবে আকর্ষণীয় হতে পারে।

এই আচরণটি নতুন নয়; এটি প্রথম ২০১৭ সালে লক্ষ্য করা গিয়েছিল। সেই সময়, মেঝেতে চৌকো এঁকে তাতে বিড়ালদের বসার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। যদিও সব বিড়াল এই পরীক্ষায় সাড়া দেয়নি, তবে বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণীরা চিহ্নিত স্থানগুলিতে আগ্রহ দেখিয়েছিল। গবেষণা আরও দেখায় যে, বিড়ালরা কেবল বাস্তব বাক্সেই নয়, বরং কাল্পনিক বা দুই-মাত্রিক (2-D) চৌকো নকশাতেও বসতে পছন্দ করে। হান্টার কলেজের গবেষক গ্যাব্রিয়েলা স্মিথের একটি গবেষণা অনুসারে, বিড়ালরা 'কানিসজা স্কোয়ার' (Kanizsa Square) নামে পরিচিত একটি চাক্ষুষ বিভ্রমের প্রতিও আকৃষ্ট হয়, যেখানে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন অংশ একটি সম্পূর্ণ চৌকো আকৃতির ধারণা তৈরি করে। এটি প্রমাণ করে যে বিড়ালরা কেবল বস্তুর বাস্তব উপাদানের প্রতি নয়, বরং আকৃতির ধারণার প্রতিও সংবেদনশীল।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে, বিড়ালরা তাদের লোমশ শরীর ব্যবহার করে। ঠান্ডা আবহাওয়ায় তারা নিজেদের গুটিয়ে রাখে এবং গরমকালে শরীর ঠান্ডা করার জন্য শরীর প্রসারিত করে। তাদের শরীরের তাপমাত্রা মানুষের তুলনায় বেশি থাকে, প্রায় ৩৮-৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গরমকালে তারা শরীর ঠান্ডা রাখতে জিহ্বা দিয়ে নিজেদের লোম চাটে, কারণ লালার বাষ্পীভবন শরীরকে ঠান্ডা করতে সাহায্য করে। সুতরাং, বিড়ালদের চিহ্নিত চৌকো জায়গায় বসে থাকার প্রবণতা তাদের সহজাত প্রবৃত্তি, পারিপার্শ্বিক বৈপরীত্য, তাপমাত্রার প্রভাব এবং এমনকি চাক্ষুষ বিভ্রমের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতার সম্মিলিত ফল।

উৎসসমূহ

  • desired.de

  • Frankfurter Rundschau

  • Tierwelt

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।