পেরুতে, যেখানে সরকারিভাবে ৪৮টি আদিবাসী ভাষা স্বীকৃত, সেখানে ভাষা বিলুপ্তির হুমকির মুখে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তরুণ প্রজন্ম সক্রিয়ভাবে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেচুয়া এবং শিপিবো-কোনিবোর মতো ভাষাগুলোকে সংরক্ষণ ও বিকাশের চেষ্টা করছে। এই আন্দোলনটি কেবল ঐতিহ্য রক্ষার গণ্ডি পেরিয়ে সক্রিয় ডিজিটাল সৃজনে রূপান্তরিত হচ্ছে, যেখানে শতবর্ষের ঐতিহ্য গণমাধ্যমের জগতে নতুন মাত্রা পাচ্ছে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে পৌঁছাচ্ছে।
এই উদ্যোগগুলো তৃণমূল সম্প্রদায় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উভয় দিক থেকেই আসছে, যা ঐতিহ্য ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সফল সংমিশ্রণ প্রদর্শন করছে। কুসকো এবং উকায়ালি অঞ্চলের সম্প্রদায়গুলো তাদের স্থানীয় রেডিও স্টেশন ব্যবহার করে মাতৃভাষায় অনুষ্ঠান সম্প্রচার করছে, যার ফলে স্থানীয় পরিচিতি আরও দৃঢ় হচ্ছে। রেডিও শিপিবো, ঞাওয়ি আন্দিনো এবং আশানিনকা এফএম-এর মতো স্টেশনগুলো ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাটগুলোর সাথে পডকাস্ট এবং স্ট্রিমিং পরিষেবাগুলোকে দক্ষতার সাথে একীভূত করছে, যা ভাষা ব্যবহারের ক্ষেত্রকে সীমিত সংখ্যক ভাষাভাষীর বৃত্তের বাইরে প্রসারিত করছে। পেরুর সংস্কৃতি মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী, ৭০টিরও বেশি গ্রামীণ রেডিও স্টেশন আদিবাসী ভাষায় বিষয়বস্তু সম্প্রচার করে, যা ২০ লক্ষেরও বেশি শ্রোতার কাছে পৌঁছায়।
এই পুনরুজ্জীবনের একটি মূল কারণ হলো অডিওভিজ্যুয়াল বিষয়বস্তুর দ্রুত বিকাশ। তরুণ নির্মাতারা, ঐতিহ্যের বাহক হিসেবে নিজেদের ভূমিকা উপলব্ধি করে, টিকটক এবং ইউটিউবের মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলো সক্রিয়ভাবে ব্যবহার করছেন। তারা তাদের ভিডিওগুলোতে কেচুয়া, শিপিবো এবং আশানিনকা ভাষায় সাবটাইটেল যুক্ত করছেন। এর ফলে লক্ষ লক্ষ ভিউ পাওয়া যাচ্ছে এবং সমাজে ভাষাগত বিদ্বেষ কমাতে সাহায্য করছে, যা সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্যকে জাতীয় সম্পদে পরিণত করার পথ দেখাচ্ছে।
এই ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি এসেছে মেশিন লার্নিং ব্যবহার করা প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে। উদাহরণস্বরূপ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা চালু করা ‘রিমাই’ (Rimay) উদ্যোগটি কেচুয়া এবং শিপিবো ভাষায় স্বয়ংক্রিয়ভাবে সাবটাইটেল তৈরির জন্য ন্যাচারাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং (NLP) অ্যালগরিদম ব্যবহার করছে। এই প্রযুক্তিগত অর্জন আদিবাসী ভাষাগুলোতে সংবাদ অনুষ্ঠান এবং চলচ্চিত্রের অনুবাদ করার সুযোগ খুলে দিয়েছে, যা শহুরে শ্রোতাদের কাছেও সেগুলোকে সহজলভ্য করে তুলছে। এছাড়াও, ‘লেঙ্গুয়াস ভিভাস’ (Lenguas Vivas) বা ‘জীবন্ত ভাষা’ কর্মসূচির অধীনে সংস্কৃতি মন্ত্রক এবং শিক্ষা মন্ত্রকের মধ্যে সহযোগিতা ডিজিটাল সরঞ্জাম ব্যবহার করে দ্বিভাষিক শিক্ষা বাস্তবায়ন করছে।
এই আন্দোলনটি কেবল ভাষাগত পুনরুদ্ধার নয়, বরং শিকড়ের সাথে সংযোগের একটি গভীর পুনঃচিন্তা। যদিও কেচুয়া দক্ষিণ আমেরিকার অন্যতম বহুল প্রচলিত আদিবাসী ভাষা, যা প্রায় ১ কোটি ৪৫ লক্ষ মানুষ ব্যবহার করে, তবুও অন্যান্য ভাষাগুলো গুরুতর সংকটে রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পেরুভিয়ান আমাজোনিয়ার তাউশিরো ভাষার ২০১৭ সালে মাত্র একজন বক্তা ছিলেন, যা ডিজিটাল সহায়তার বর্তমান প্রচেষ্টার জরুরি প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে। মিডিয়া এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে এই ধরনের পুনরুজ্জীবন একটি শক্তিশালী বার্তা দেয় যে স্প্যানিশ ভাষার আধিপত্য সহ বাহ্যিক পরিস্থিতি সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য সংরক্ষণের ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য বাধা নয়, বরং প্রযুক্তিই হতে পারে সংরক্ষণের প্রধান হাতিয়ার।