ওডিশার গবেষক বিক্রম বিরুলি: হো ভাষা সংরক্ষণে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রয়োগ

সম্পাদনা করেছেন: Vera Mo

ওডিশা রাজ্যের ময়ূরভঞ্জ জেলার আদিবাসী হো মাতকাম সাহি গ্রামের ২৯ বছর বয়সী তরুণ গবেষক বিক্রম বিরুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তির মাধ্যমে হো ভাষা সংরক্ষণে তার যুগান্তকারী কাজের জন্য স্বীকৃতি অর্জন করেছেন। প্রাচীন ঐতিহ্যকে রক্ষা করতে আধুনিক প্রযুক্তি কীভাবে সহায়ক হতে পারে, তার এই প্রচেষ্টা তারই এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বিরুলি ওডিশার কলিঙ্গ ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস (KiSS) থেকে তার ডক্টরেট ডিগ্রি সম্পন্ন করেন। তিনি সেপ্টেম্বরের ২০২৫ সালে এই ডিগ্রি লাভ করেন এবং এর মাধ্যমে তিনি হো সম্প্রদায়ের প্রথম গবেষক হিসেবে ভাষাগত সংরক্ষণের জন্য এআই ব্যবহার করার কৃতিত্ব অর্জন করেন।

বিরুলির এই যাত্রার শুরুটা হয়েছিল তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে। তিনি স্মরণ করেন, কীভাবে গরু চরানোর সময় তিনি স্লেট বোর্ডে চক দিয়ে লিখে তার মাতৃভাষা শেখার চেষ্টা করতেন। এই সাংস্কৃতিক নিমজ্জনই তার উচ্চাকাঙ্ক্ষী প্রকল্পের ভিত্তি তৈরি করে, যার মূল লক্ষ্য হলো ইংরেজি বা হিন্দির মতো হো ভাষার শব্দগুলোকেও যেন মেশিন শনাক্ত করতে পারে। হো ভাষাটি অস্ট্রোএশিয়াটিক ভাষা পরিবারের অন্তর্গত। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, প্রায় ১.৪ মিলিয়ন মানুষ এই ভাষায় কথা বলেন, যাদের বেশিরভাগই ঝাড়খণ্ড এবং ওডিশায় বসবাস করেন। যদিও ২০১১ সালে ঝাড়খণ্ডে ভাষাটি 'দ্বিতীয় সরকারি ভাষা'র মর্যাদা পেয়েছিল, তবুও এটি এখনও ভারতের সংবিধানের অষ্টম তফসিলে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যা এটিকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে। এই সম্প্রদায়ের বহু মানুষের কাছে, এই ভাষা তাদের অস্তিত্ব এবং জাতিগত স্মৃতির সমার্থক।

তার ডক্টরাল গবেষণার অংশ হিসেবে, বিরুলি একটি অত্যাধুনিক এআই মডেল তৈরি করেন, যা তিনটি মূল বিষয়ের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। তিনি হো ভাষার মৌখিক বক্তব্যকে লেখায় রূপান্তরের জন্য স্বয়ংক্রিয় স্পিচ রেকগনিশন (ASR) প্রযুক্তি ব্যবহার করেন। এছাড়াও, তিনি শব্দের প্রকারভেদকে শ্রেণীবদ্ধ করার জন্য নেমড এনটিটি রিকগনিশন (Named Entity Recognition) এবং ব্যাকরণগত কাঠামো বিশ্লেষণ করার জন্য পার্ট-অফ-স্পিচ ট্যাগিং (POS Tagging) প্রয়োগ করেন। মডেলটিকে প্রশিক্ষিত করার জন্য, হো ভাষার প্রায় ২০,০০০ বাক্য রূপান্তরিত করা হয়েছিল। এই বাক্যগুলি লাকো বোদ্রা কর্তৃক সৃষ্ট স্বতন্ত্র লিপি 'বারাং ক্ষিতি' (Warang Kshiti) ব্যবহার করে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। দেবনাগরী বা ল্যাটিন ভিত্তিক বিকল্পগুলির চেয়ে ভাষার স্থানীয় বক্তারা এই বারাং ক্ষিতি লিপিটিকেই বেশি পছন্দ করেন।

বিরুলির এই কাজটি বিদ্যমান গতানুগতিক ধারণার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী জবাব, যা ডিজিটাল পরিসরে ভাষার গুরুত্ব বাড়ানোর দিকে নিবদ্ধ। এই বিজ্ঞানী এখন ভারতের উপজাতীয় বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কাছে তার এআই মডেলটিকে সরকারি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মগুলোতে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন। তিনি হো ভাষাকে এমন অ্যাপ্লিকেশনগুলোতে যুক্ত করার চেষ্টা করছেন, যেমন 'আদি বাণী' (Adi Vaani), যা ইতিমধ্যেই গোন্ডি, ভিলি, মুন্ডারি এবং সাঁওতালি (Santali)-এর মতো ভাষাগুলোকে সমর্থন করে। পাশাপাশি তিনি গুগল ট্রান্সলেটেও হো ভাষাকে যুক্ত করতে চান। এই প্রকল্পের সফল বাস্তবায়ন দেশে উপজাতীয় ভাষাগুলোর ডিজিটাল দৃশ্যমানতা এবং মর্যাদার জন্য একটি নজির স্থাপন করতে পারে, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে তাদের ঐতিহ্য হস্তান্তরের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

উৎসসমূহ

  • The Indian Express

  • From grazing cattle to training AI: How a Ho scholar is digitally reviving his mother tongue

  • He Once Grazed Cattle — Now He’s Using AI to Save His Mother Tongue

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।