কানাডার মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের (University of Montreal) গবেষকরা সম্প্রতি একটি চমকপ্রদ গবেষণা প্রকাশ করেছেন, যেখানে দেখা গেছে যে শিশুরা গর্ভধারণের শেষ সপ্তাহগুলিতে যে ভাষাগুলির সংস্পর্শে আসে, সেগুলি প্রসবের পরেও তারা চিনতে পারে। এই গবেষণার ফলাফলগুলি ২০২৫ সালে *Communications Biology* জার্নালে প্রকাশিত হয়। এটি নিশ্চিত করে যে নবজাতকের মস্তিষ্ক জন্মের আগেই তার চারপাশের শব্দ পরিবেশের সঙ্গে সক্রিয়ভাবে নিজেদের মানিয়ে নেয়—যা আসলে শব্দময় জগতে প্রবেশ করার আগে উপলব্ধির সিস্টেমগুলির এক সূক্ষ্ম প্রস্তুতি।
এই পরীক্ষাটিতে মোট ৬০ জন অংশগ্রহণকারী ছিলেন, যাদের মাতৃভাষা ছিল ফরাসি। গর্ভাবস্থার ৩৫তম সপ্তাহ থেকে শুরু করে প্রসবের সময় পর্যন্ত, এই মহিলাদের মধ্যে ৩৯ জনকে প্রতিদিন দশ মিনিটের জন্য পেটের ওপর ফরাসি ভাষার একটি শিশুদের গল্পের অডিও শোনানো হতো। এর পাশাপাশি, তাদের জার্মান বা হিব্রু-এর মতো একটি বিদেশি ভাষার অডিওও শোনানো হয়েছিল। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে ভ্রূণের শ্রবণ ব্যবস্থা গর্ভাবস্থার ষষ্ঠ মাস শেষ হওয়ার আগেই প্রায় সম্পূর্ণভাবে পরিপক্ক হয়ে ওঠে, যা তাদের বাইরের শব্দে প্রতিক্রিয়া জানাতে এবং পরিচিত কণ্ঠস্বর ও সঙ্গীতকে আলাদা করতে সাহায্য করে।
গবেষণার দ্বিতীয় পর্যায়টি শুরু হয় জন্মের অল্প পরেই, যখন শিশুরা ঘুমাচ্ছিল (জীবনের ১০ থেকে ৭৮ ঘণ্টার মধ্যে)। বিজ্ঞানীরা এই সময় কার্যকরী নিয়ার-ইনফ্রারেড স্পেকট্রোস্কোপি (fNIRS) ব্যবহার করে শিশুদের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করেন। যখন শিশুদের তাদের মাতৃভাষা ফরাসি শোনানো হচ্ছিল, তখন মস্তিষ্কের বাম টেম্পোরাল লোবে (left temporal lobe) স্পষ্ট কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়। বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য হলো, হিব্রু বা জার্মান ভাষা শোনার সময়ও একই ধরনের কার্যকলাপের প্যাটার্ন দেখা গিয়েছিল, তবে শুধুমাত্র সেই শিশুদের মধ্যে যারা জন্মের আগে এই ভাষাগুলোর সংস্পর্শে এসেছিল।
মন্ট্রিয়ল বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউরোসাইকোলজির অধ্যাপক এবং এই গবেষণার প্রধান, আন গাল্লাঘার (Anne Gallagher), জোর দিয়ে বলেছেন যে মাত্র কয়েক সপ্তাহের জন্য প্রতিদিনের এই সংক্ষিপ্ত শ্রবণও স্নায়ু নেটওয়ার্কের সংগঠনকে পরিবর্তন করার জন্য যথেষ্ট। শিশু বিশেষজ্ঞ-স্নায়ু বিশেষজ্ঞ আনা ক্যারোলিনা কোয়ান (Ana Carolina Coan) আরও যোগ করেছেন যে গর্ভকালীন পরিবেশ শিশুর জন্মের আগেই মস্তিষ্কে তথ্য প্রক্রিয়াকরণের কাঠামো তৈরি করতে শুরু করে। এই কাজের মূল লক্ষ্য হলো গভীরভাবে বোঝা যে কীভাবে গর্ভে থাকা অবস্থায় শ্রবণের অভিজ্ঞতা পরবর্তী ভাষা বিকাশের ভিত্তি স্থাপন করে এবং সম্ভাব্য বাক-ত্রুটি নির্ণয়ে সাহায্য করতে পারে।