সুইজারল্যান্ডের সাইকেল ডি'ওরিয়েন্টেশন ডি লা গ্লেন (COGL) স্কুল শিক্ষার্থীদের ঘুমের মান উন্নত করার লক্ষ্যে একটি যুগান্তকারী আন্তঃবিষয়ক প্রকল্প চালু করেছে। ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে শুরু হওয়া এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হলো স্মার্টফোন ব্যবহারের সঙ্গে জড়িত শিক্ষার্থীদের ঘুমের সমস্যা সমাধান করা। একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, COGL-এ ভর্তি হওয়া ৯৮% শিক্ষার্থীরই একটি স্মার্টফোন রয়েছে, যা এই প্রকল্পের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।
প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের ঘুমের প্রক্রিয়া সম্পর্কে শিক্ষিত করা, ঘুমের ওপর স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রভাব বিস্তারকারী কারণগুলো চিহ্নিত করা এবং শিক্ষার্থীদের মধ্যে তাদের ডিজিটাল অভ্যাসের প্রতি সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা গড়ে তোলা। যদিও ২০১৬ সালে ফ্রাইবুর্গ স্কুলগুলোতে মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছিল, তবুও এর প্রভাব এখনও বিদ্যমান। এটি পারিবারিক দ্বন্দ্ব, সামাজিক মাধ্যমে মেজাজের পরিবর্তন এবং মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তির উপর ঘুমের অভাবের মতো সমস্যাগুলিতে প্রকাশ পায়।
এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার জন্য COGL প্রকল্পটি বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষাদলকে একত্রিত করেছে। শিক্ষার্থীরা প্রথমে ঘুমের জার্নাল তৈরি করবে, যার ডেটা গণিত ও কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিশ্লেষণ করা হবে। ফরাসি ভাষায় এই বিষয়ে আলোচনা করা হবে এবং বিজ্ঞানে এর প্রেক্ষাপট তৈরি করা হবে। শারীরিক শিক্ষা শ্বাস-প্রশ্বাস এবং পুনরুদ্ধারের রুটিনের উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করবে, সঙ্গীত শান্তিদায়ক অডিও অন্বেষণ করবে এবং ভিজ্যুয়াল আর্টস ঘুমের থিমযুক্ত শিল্পকর্ম তৈরি করবে।
স্কুলটি স্মার্টফোনকে একটি 'তৃতীয় শিক্ষক' হিসেবে উল্লেখ করে প্রযুক্তির ব্যাপক প্রভাবকে স্বীকার করে। তারা শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ডিভাইসের আনফিল্টার্ড নেটওয়ার্ক থেকে তাদের নিজস্ব সুরক্ষিত, ফিল্টার করা ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ককে আলাদা করেছে। এই প্রকল্পটি কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহারের ক্রমবর্ধমান উদ্বেগের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। বিভিন্ন গবেষণা অনুসারে, অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর আগে, ঘুমের বিলম্ব এবং ঘুমের সময়কাল হ্রাস করে, যা একাডেমিক কর্মক্ষমতাকে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে স্মার্টফোনের স্ক্রিন থেকে নির্গত নীল আলো মেলাটোনিন উৎপাদনকে দমন করে, যা ঘুম-জাগরণ চক্র নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এর ফলে মস্তিষ্ক সক্রিয় থাকে, যা সহজে শান্ত হতে বাধা দেয়। এই মানসিক উদ্দীপনা এবং 'ফোমো' (FOMO - Fear Of Missing Out) বা কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় শিক্ষার্থীদের রাতে জেগে থাকতে উৎসাহিত করে, যা ঘুমের গুণমান এবং সময়কাল উভয়কেই হ্রাস করে।
প্রকল্পটি পরিবারগুলিকে সারা বছর ধরে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সুস্থতা এবং শেখার প্রচার করতে চায়। এটি অভিভাবকদের সঙ্গে সহযোগিতা করে স্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস এবং ভারসাম্যপূর্ণ প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রচারের লক্ষ্য রাখে। এই উদ্যোগটি কেবল একটি শিক্ষাগত প্রকল্প নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক পরিবর্তনের অংশ, যেখানে তরুণ প্রজন্মকে প্রযুক্তির যুগে সুস্থ জীবনযাপন এবং জ্ঞান অর্জনের মধ্যে ভারসাম্য খুঁজে পেতে সহায়তা করা হচ্ছে। এই সমন্বিত প্রচেষ্টা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ডিজিটাল সাক্ষরতা এবং আত্ম-নিয়ন্ত্রণের বোধ তৈরি করবে, যা তাদের ভবিষ্যতের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি স্থাপন করবে।