শিক্ষার্থীর বৈচিত্র্য মোকাবিলা ও উন্নত শিক্ষার জন্য স্নায়ুবিজ্ঞানের সমন্বয়ে প্রগতিশীল শিক্ষণ পদ্ধতি
সম্পাদনা করেছেন: Olga Samsonova
একবিংশ শতাব্দীর উপযোগী, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং সমালোচনামূলক শিক্ষণ বিকাশের জন্য প্রগতিশীল শিক্ষাব্যবস্থার দাবি হলো পুরনো কাঠামোকে নতুন করে সাজানো। যে 'গড়পড়তা শিক্ষার্থী' বাস্তবে নেই, তার জন্য মানসম্মত শিক্ষণ পদ্ধতি থেকে সরে আসা অপরিহার্য। বিশ্বজুড়ে শিক্ষার্থীদের পনেরো শতাংশেরও বেশি বিশেষ শিক্ষণ চাহিদা নিয়ে বেড়ে উঠছে, যার মধ্যে রয়েছে এডিএইচডি, অটিজম স্পেকট্রাম ডিসঅর্ডার (টিইএ), শিখন অক্ষমতা এবং প্রতিভাধরতা। এত বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীর জন্য প্রকৃত অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় সমর্থন ও সম্পদ এখনও অপর্যাপ্ত।
স্নায়ুবিজ্ঞান এই সত্যকে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করে যে সুসংগঠিত পুনরাবৃত্তি এবং সুনির্দিষ্ট পরিবেশ মস্তিষ্কের নমনীয়তাকে উন্নত করে। স্ট্যানিসলাস দেহাএনের (২০১৮) গবেষণা অনুযায়ী, মনোযোগ ধরে রাখা এবং দীর্ঘমেয়াদী শিক্ষার জন্য স্পষ্ট রুটিন অপরিহার্য। এডিএইচডি বা টিইএ আক্রান্ত শিক্ষার্থীদের জন্য স্পষ্ট সময়সূচি এবং সক্রিয় বিশ্রামের মাধ্যমে উদ্বেগ হ্রাস করা সম্ভব। অন্যদিকে, প্রতিভাধর শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ধরে রাখতে হলে তাদের জন্য এমন চ্যালেঞ্জিং, উন্মুক্ত-প্রান্তের প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন যা তাদের উদ্দীপনা বজায় রাখে।
বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা প্রায়শই হ্রাসবাদী, মুখস্থ-নির্ভর পরীক্ষার ওপর নির্ভর করে, যা প্রকৃত দক্ষতা পরিমাপ করতে ব্যর্থ হয়। এর ফলস্বরূপ, পর্যাপ্ত চ্যালেঞ্জের অভাবে প্রতিভাধর শিক্ষার্থীরাও ব্যর্থতার অনুভূতি লাভ করে এবং ঝরে পড়ার ঝুঁকিতে থাকে (ফ্রিমান, ২০১৩)। এই পরিস্থিতিতে, মূল্যায়নের পদ্ধতি পরিবর্তন করা জরুরি। সেসার কল সমর্থন করেন যে মূল্যায়ন অবশ্যই গঠনমূলক, চলমান এবং বৈচিত্র্যময় হওয়া উচিত। ঐতিহ্যবাহী পরীক্ষার ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর না করে পোর্টফোলিও এবং স্ব-মূল্যায়নের মতো নমনীয় পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
ডিজিটালাইজেশন সম্পদের সহজলভ্যতা এবং শিক্ষাকে ব্যক্তিগতকৃত করার সুযোগ এনেছে। তবে, বিশেষজ্ঞ ফ্রান্সিসকো তনুচ্চি সতর্ক করেছেন যে প্রযুক্তি যেন অপরিহার্য মানবিক মিথস্ক্রিয়া, আবেগজনিত আলোচনা এবং শিক্ষক-প্রেরণাকে প্রতিস্থাপন না করে, বরং পরিপূরক হয়। শিক্ষাবিদদের মতে, শিক্ষণ প্রযুক্তির ব্যবহার একটি ভারসাম্যপূর্ণ কাঠামোয় হওয়া উচিত, যেখানে যন্ত্র কেবল সহায়ক ভূমিকা পালন করে, মূল চালিকাশক্তি নয়।
শিক্ষার লক্ষ্য হলো শিক্ষার্থীদের প্রকৃত বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং একটি ন্যায্য মূল্যায়ন ব্যবস্থা থেকে সরে আসা। শিক্ষকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও উপকরণ সরবরাহ করা প্রয়োজন, যাতে তারা প্রযুক্তির সুবিধা গ্রহণ করেও প্রকৃত শিক্ষণ অভিজ্ঞতার ভারসাম্য বজায় রাখতে পারেন। শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় এই পরিবর্তন আনা প্রয়োজন যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থী তাদের নিজস্ব গতিতে এবং নিজস্ব উপায়ে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়, যা সামগ্রিক মানব সম্ভাবনার উন্মোচনে সহায়ক। শিক্ষণ পদ্ধতির এই পুনর্বিন্যাস আসলে প্রতিটি শিশুর ভেতরের অপার সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দেওয়ার একটি প্রক্রিয়া, যেখানে প্রতিটি ভিন্নতা একটি নতুন পথের দিশা দেখায়।
আধুনিক শিক্ষণ গবেষণায় 'গ্রোথ মাইন্ডসেট' (বৃদ্ধির মানসিকতা) ধারণার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের শেখায় যে বুদ্ধিমত্তা স্থির নয়, বরং প্রচেষ্টা ও কৌশল পরিবর্তনের মাধ্যমে উন্নত করা সম্ভব। এই মানসিকতা শিক্ষার্থীদের ব্যর্থতাকে শেখার সুযোগ হিসেবে দেখতে উৎসাহিত করে, যা প্রচলিত পরীক্ষার চাপকে হ্রাস করে। এছাড়াও, গবেষণায় দেখা গেছে যে শিক্ষণ প্রক্রিয়ায় 'গ্যামিফিকেশন' বা খেলার উপাদান যুক্ত করা হলে শিক্ষার্থীদের মনোযোগের সময়কাল উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়, বিশেষত যারা গতানুগতিক পদ্ধতিতে সহজে মনোযোগ দিতে পারে না।
উৎসসমূহ
La Opinión - El Correo de Zamora
UNESCO: Más del 15% del alumnado en el mundo presenta alguna necesidad educativa específica
American Academy of Pediatrics: Nuevas recomendaciones sobre el tiempo de pantalla para niños y adolescentes
Por qué el sistema educativo falla a los niños con TDAH
El impacto de la tecnología en la educación en 2025
El impacto de la tecnología en la educación en 2025
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
