বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আনছে সিমুলেশন-ভিত্তিক শিক্ষা (Simulation-Based Education - SBE)। সামাজিক পরিবর্তন, প্রযুক্তির অগ্রগতি এবং কর্মক্ষেত্রের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের একটি নিরাপদ পরিবেশে কারিগরি, জ্ঞানীয় ও সামাজিক-আবেগিক দক্ষতা অর্জনে সহায়তা করছে। বিভিন্ন অনুষদের মধ্যে সমন্বয় এবং অত্যাধুনিক সিমুলেশন কেন্দ্র স্থাপন করা এই রূপান্তরের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR)-এর মতো উন্নত প্রযুক্তির সমন্বয়ে গঠিত সিমুলেশন কেন্দ্রগুলো শিক্ষাগত উদ্ভাবন, প্রায়োগিক গবেষণা এবং নতুন প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করে। সিমুলেশন-ভিত্তিক শিক্ষার মূল শক্তি হলো এটি বাস্তব পৃথিবীর বিভিন্ন পরিস্থিতিকে একটি নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফুটিয়ে তুলতে পারে। এর ফলে শিক্ষার্থীরা কোনো প্রকার ঝুঁকি ছাড়াই অনুশীলন করতে, সিদ্ধান্ত নিতে এবং তাদের কাজের ফলাফল পর্যবেক্ষণ করতে পারে। এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের পেশাগত জীবনের জন্য প্রস্তুত করে, আত্মবিশ্বাস বাড়ায় এবং অভিজ্ঞতার মাধ্যমে তাদের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।
স্বাস্থ্যসেবা, প্রকৌশল, আইন, সামাজিক বিজ্ঞান, শিক্ষা এবং প্রশাসনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সিমুলেশন-ভিত্তিক শিক্ষার প্রয়োগ দেখা যায়, যা এর আন্তঃবিষয়ক (interdisciplinary) প্রকৃতিকে তুলে ধরে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের সক্রিয় ও শিক্ষার্থী-কেন্দ্রিক শিক্ষায় উৎসাহিত করে, তত্ত্ব ও প্রয়োগের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে এবং সমালোচনামূলক চিন্তাভাবনা ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা বিকাশে সহায়তা করে। অত্যাধুনিক সিমুলেশন কেন্দ্রগুলো কেবল প্রযুক্তি-সমৃদ্ধ স্থান নয়, বরং এগুলো এমন শিক্ষামূলক বাস্তুতন্ত্র (learning ecosystems) যা গবেষণা এবং জ্ঞান বিনিময়ের ক্ষেত্র তৈরি করে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (AI) ব্যবহার সিমুলেশনকে আরও ব্যক্তিগত (personalized) করে তোলে এবং শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি পর্যবেক্ষণে সহায়তা করে। অগমেন্টেড রিয়ালিটি (AR) এবং ভার্চুয়াল রিয়ালিটি (VR) উচ্চ-ঝুঁকিপূর্ণ বা দুর্লভ পদ্ধতি, যেমন বিশেষায়িত সার্জারি অনুশীলনের জন্য নিমগ্ন ত্রিমাত্রিক (3D) পরিবেশ তৈরি করে। সিমুলেশন-ভিত্তিক শিক্ষার কার্যকারিতা সবচেয়ে বেশি হয় যখন এটি কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয়: প্রস্তুতি ও প্রেক্ষাপট তৈরি, সিমুলেশন অনুশীলন ও পর্যবেক্ষণ এবং একটি নির্দেশিত আলোচনা (debriefing) পর্ব। এই আলোচনা শিক্ষার্থীদের সাফল্য, ভুল এবং উন্নতির ক্ষেত্রগুলো নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ দেয়, যা শেখার প্রক্রিয়াকে দৃঢ় করে।
বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে সিমুলেশন-ভিত্তিক শিক্ষা শ্রেণিকক্ষ এবং পেশাগত বাস্তবতার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করে। এটি শিক্ষার্থীদের পর্যবেক্ষণযোগ্য এবং স্থানান্তরযোগ্য পেশাগত যোগ্যতা প্রদান করে, যা তাদের জটিল ও গতিশীল পরিবেশের জন্য প্রস্তুত করে তোলে। একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, সিমুলেশন-ভিত্তিক অনলাইন প্রশিক্ষণ প্রচলিত প্রশিক্ষণের তুলনায় শিক্ষার্থীদের কর্মক্ষমতা ২০% পর্যন্ত উন্নত করতে পারে এবং উৎপাদনশীলতা ১৪% পর্যন্ত বৃদ্ধি করতে পারে। আন্তঃবিষয়ক উন্নত সিমুলেশন কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করার মাধ্যমে একটি সামগ্রিক, ব্যবহারিক এবং প্রযুক্তিগতভাবে উন্নত বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব, যা বিশ্বায়িত ও ডিজিটাল বিশ্বের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ।