যুক্তরাজ্য সরকার লন্ডনের তীব্র আবাসন সংকট মোকাবিলায় দুটি নতুন শহর নির্মাণের যুগান্তকারী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ২০২৫ সালে এনফিল্ডের ক্রুস হিল এবং গ্রিনিচের টেমসমেড এলাকায় এই নতুন শহর দুটি গড়ে তোলা হবে। এই বিশাল নির্মাণযজ্ঞের মধ্যে এনফিল্ডের কাজটি আসন্ন জাতীয় নির্বাচনের আগেই শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ক্রুস হিল এলাকায় প্রায় ২১,০০০ নতুন বাড়ি তৈরি করা হবে। এর পাশাপাশি জিপি সার্জারি, স্কুল এবং বিনোদন কেন্দ্রের মতো অত্যাবশ্যকীয় পরিকাঠামোও স্থাপন করা হবে। এনফিল্ড কাউন্সিল পূর্বে তাদের স্থানীয় পরিকল্পনাতে ক্রুস হিলকে বিপুল সংখ্যক পারিবারিক বাসস্থান নির্মাণের জন্য উপযুক্ত স্থান হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। তবে, পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলো গ্রিন বেল্ট (সবুজ বেষ্টনী) এলাকায় নির্মাণের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে, টেমসমেড এলাকাটি বর্তমানে একটি বৃহৎ পুনর্জন্ম প্রকল্পের অধীনে রয়েছে, যা এটিকে নতুন শহর নির্মাণের জন্য একটি শক্তিশালী প্রার্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই এলাকার পরিবহন ব্যবস্থার উন্নতি সাধনের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যার মধ্যে একটি সম্ভাব্য ডকল্যান্ডস লাইট রেলওয়ে (DLR) সম্প্রসারণও অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে, যা কেন্দ্রীয় লন্ডনের সাথে যোগাযোগ আরও সহজ করবে।
এই উভয় প্রকল্পের মূল লক্ষ্য হলো হাজার হাজার নতুন আবাসন তৈরি করে লন্ডনের তীব্র আবাসন ঘাটতি পূরণ করা এবং স্থানীয় সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা। এই উন্নয়নগুলি অব্যবহৃত এলাকাগুলির পুনরুজ্জীবন এবং শহরের ক্রমবর্ধমান আবাসনের চাহিদা মেটানোর বৃহত্তর কৌশলের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। বর্তমানে, ক্রুস হিল এবং টেমসমেড উভয় এলাকার জন্যই পরিকল্পনা ও পরামর্শ প্রক্রিয়া পুরোদমে চলছে। এই প্রচেষ্টাগুলি পরিবেশগত বিষয়গুলি বিবেচনা করার পাশাপাশি প্রকল্পগুলি যাতে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, এই প্রকল্পগুলির মাধ্যমে প্রায় ৩৫,০০০ এর বেশি নতুন বাড়ি তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্রুস হিল এলাকায় প্রায় ২১,০০০ বাড়ি এবং টেমসমেডে প্রায় ১৫,০০০ বাড়ি নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই উদ্যোগগুলি কেবল আবাসন সরবরাহ বৃদ্ধিই করবে না, বরং নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং স্থানীয় অর্থনীতির বিকাশেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। পরিবেশগত উদ্বেগ সত্ত্বেও, এই প্রকল্পগুলি সবুজ বেল্টের মতো সংবেদনশীল এলাকায় উন্নয়নের একটি ভারসাম্যপূর্ণ পদ্ধতির উপর জোর দিচ্ছে, যেখানে প্রায় ৫০% সাশ্রয়ী মূল্যের আবাসন তৈরির উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে। এই উন্নয়নগুলি লন্ডনের আবাসন চাহিদা পূরণের পাশাপাশি পরিবেশগত সুরক্ষার বিষয়টিও মাথায় রাখবে।
লন্ডনের আবাসন সংকট নিরসনে সরকারি এই নতুন শহর নির্মাণের পরিকল্পনা একটি সাহসী পদক্ষেপ। হাজার হাজার নতুন বাড়ি তৈরির প্রতিশ্রুতি, বিশেষ করে এমন একটি শহরে যেখানে চাহিদা অত্যন্ত বেশি, তা প্রশংসার যোগ্য। তবে, গ্রিন বেল্ট ভূমি নিয়ে পরিবেশবাদী গোষ্ঠীগুলোর উদ্বেগ একটি গুরুতর বিষয়, যা সাবধানে মোকাবিলা করা প্রয়োজন। এই নতুন শহরগুলির কার্যকারিতা এবং স্থায়িত্ব শেষ পর্যন্ত নতুন বাসিন্দাদের একীভূত করার, প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদানের এবং পরিবেশগত সীমানা সম্মান করার ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে।