চীন ২০২৬ সালের শেষ পর্যন্ত ইউরোপের জন্য ভিসা-মুক্ত সুবিধা বাড়ালো এবং সুইডেনকে অন্তর্ভুক্ত করলো

সম্পাদনা করেছেন: S Света

ভিসা-মুক্ত প্রবেশ

আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গভীর করা এবং পর্যটন খাতকে চাঙ্গা করার লক্ষ্যে গণপ্রজাতন্ত্রী চীন সরকার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের (এমআইডি কেএনআর) সরকারি মুখপাত্র মাও নিং সোমবার নিশ্চিত করেছেন যে বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশের নাগরিকদের জন্য ভিসা-মুক্ত প্রবেশাধিকার কর্মসূচিটি কেবল বাড়ানোই হয়নি, বরং এর পরিধিও বৃদ্ধি করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্তটি ইউরোপ ও চীনের মধ্যে ব্যবসায়িক এবং ব্যক্তিগত যোগাযোগকে উৎসাহিত করার জন্য নেওয়া হয়েছে, যা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন মাত্রা দেবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বর্তমানে কার্যকর থাকা ভিসা-মুক্ত ব্যবস্থাটি, যা প্রাথমিকভাবে শেষ হওয়ার কথা ছিল, তা ফ্রান্স সহ অন্যান্য দেশের জন্য ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা ভ্রমণ এবং বিনিয়োগের জন্য আরও স্থিতিশীলতা নিয়ে এসেছে এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি পরিষ্কার দিকনির্দেশনা প্রদান করেছে। এর পাশাপাশি, সুইডেন আনুষ্ঠানিকভাবে সেই দেশগুলির তালিকায় যুক্ত হয়েছে যাদের নাগরিকরা ভিসা ছাড়াই চীনে প্রবেশ করতে পারবেন। সুইডেনের জন্য এই সুবিধাটি ২০২৫ সালের ১০ নভেম্বর থেকে কার্যকর হবে। এই দেশগুলির নাগরিকরা পর্যটন, ব্যবসা, আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা করা বা ট্রানজিটের উদ্দেশ্যে সর্বোচ্চ ৩০ দিনের জন্য চীনে থাকার অনুমতি পাবেন, যা তাদের জন্য ভ্রমণকে আরও সহজ করে তুলবে।

সুইডেনকে এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্তটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক আলোচনার ফল। ২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রধান ওয়াং ই এবং সুইডেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রী মারিয়া মালমার স্টেনারগার্ডের মধ্যে অনুষ্ঠিত সংলাপের পরই এই ঘোষণা আসে। বেইজিংয়ের এই পদক্ষেপ ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সাথে সম্পর্ক জোরদার করার বৃহত্তর কৌশলের অংশ, বিশেষত চলমান অর্থনৈতিক আলোচনার প্রেক্ষাপটে। কর্তৃপক্ষ এই সরলীকরণকে অর্থনীতির পুনরুজ্জীবনের জন্য একটি অনুঘটক হিসেবে দেখছে, বিশেষ করে আতিথেয়তা (হসপিটালিটি) খাতে, যা কঠোর নিষেধাজ্ঞার সময়কালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঐতিহাসিকভাবে, এই ধরনের ব্যবস্থাগুলি কার্যকর প্রমাণিত হয়েছে: উদাহরণস্বরূপ, ২০২৩ সালের শেষে পাঁচটি ইউরোপীয় দেশের জন্য একতরফা ভিসা-মুক্ত ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল, যা পরে প্রসারিত করা হয় এবং এর ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

কর্তৃপক্ষ এটিকে কেবল প্রশাসনিক বাধা অপসারণ হিসেবে দেখছে না, বরং আরও গভীর সংযোগের একটি আমন্ত্রণ হিসেবে বিবেচনা করছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা আন্তর্জাতিক আদান-প্রদানকে আরও সহজ ও মসৃণ করতে চাইছে। তবে, চীনের আধুনিক জীবনযাত্রার সাথে পুরোপুরি মানিয়ে নিতে হলে বিদেশী অতিথিদের স্থানীয় পেমেন্ট সিস্টেম, যেমন উইচ্যাট পে (WeChat Pay) বা আলিপে (AliPay), ব্যবহার করতে শিখতে হতে পারে। কারণ চীনে সব প্রতিষ্ঠানে আন্তর্জাতিক কার্ড বা নগদ অর্থ গ্রহণ করা হয় না, যা বিদেশিদের জন্য একটি ব্যবহারিক চ্যালেঞ্জ হতে পারে। ২০২৬ সাল পর্যন্ত এই প্রতিশ্রুতি বাড়ানো আন্তর্জাতিক বিনিময়ের সাথে জড়িত সকল পক্ষের জন্য একটি আরও স্থিতিশীল এবং নির্ভরযোগ্য ভিত্তি তৈরি করেছে।

উৎসসমূহ

  • The Korea Times

  • China extends visa-free policy to end-2026, adds Sweden to scheme

  • China and Sweden need face-to-face dialogue to rebuild trust, foreign minister says

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।