ঘানা, আফ্রিকার উন্নয়নের জন্য টোকিও আন্তর্জাতিক সম্মেলনের (TICAD 9) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হিসেবে, মহাদেশের তরুণ প্রজন্মকে উদীয়মান প্রযুক্তিতে প্রশিক্ষিত করার জন্য একটি উচ্চাভিলাষী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য হল ৩০০,০০০ আফ্রিকান তরুণ-তরুণীকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বায়োটেকনোলজি, আধুনিক কৃষি, সবুজ প্রযুক্তির রূপান্তর এবং স্টার্টআপ উন্নয়নের মতো অত্যাধুনিক ক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলা। এই প্রশিক্ষণ কর্মসূচিটি আফ্রিকার প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতামূলকতা বাড়ানোর একটি বৃহত্তর মহাদেশীয় প্রচেষ্টার অংশ।
এই উদ্যোগটি জাপানের সাথে ঘানার অংশীদারিত্বের একটি উল্লেখযোগ্য দিক, যেখানে জাপান সরকার আফ্রিকার দেশগুলিতে প্রযুক্তি এবং উদ্ভাবনের প্রসারে সহায়তা করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। TICAD 9 সম্মেলনে, জাপান আফ্রিকার সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার জন্য ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের উন্নয়ন ঋণ এবং আগামী তিন বছরে ৩০,০০০ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বিশেষজ্ঞ প্রশিক্ষণের ঘোষণা দিয়েছে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিজেরু ইশিবা একটি "ভারত মহাসাগর-আফ্রিকা অর্থনৈতিক অঞ্চল" তৈরির প্রস্তাব করেছেন, যা বাণিজ্য, অবকাঠামো এবং উদ্ভাবন বাড়াতে ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যকে আফ্রিকার সাথে সংযুক্ত করবে।
প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের উপর এই জোর ঘানার ডিজিটাল রূপান্তর কৌশলের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। ঘানা সরকার দেশের তরুণদের জন্য একটি শক্তিশালী ডিজিটাল অর্থনীতি গড়ে তোলার জন্য শিক্ষা, উদ্ভাবন এবং উদ্যোক্তা তৈরিতে বিনিয়োগ করছে। এই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে, ঘানা সরকার ডিজিটাল অবকাঠামো উন্নত করতে, ইন্টারনেট সংযোগ প্রসারিত করতে এবং ডিজিটাল সাক্ষরতা বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করছে। এই উদ্যোগগুলি তরুণদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে এবং তাদের বৈশ্বিক অর্থনীতিতে আরও কার্যকরভাবে অংশগ্রহণ করতে সহায়তা করবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অর্জিত দক্ষতাগুলি আফ্রিকার প্রযুক্তি বাজার, বিশেষ করে ফিনটেক, ই-কমার্স এবং কৃষি প্রযুক্তির মতো দ্রুত বর্ধনশীল খাতগুলিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে।
ডঃ ইউজিন ফ্রিম্পং, যিনি ডেটা অ্যানালিটিক্স এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার একজন বিশেষজ্ঞ, তিনি প্রযুক্তিতে জিডিপি-র অংশীদারিত্ব বাড়ানোর গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি আরও উল্লেখ করেছেন যে, প্রাথমিক প্রশিক্ষণের বাইরেও এই উদ্যোগের দীর্ঘমেয়াদী সাফল্য নিশ্চিত করার জন্য বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে, এই প্রশিক্ষণের কার্যকারিতা নির্ভর করবে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সাথে প্রযুক্তি প্রশিক্ষণের সমন্বয়ের উপর। ঘানার মতো দেশগুলির জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন যে, প্রশিক্ষিত কর্মীর জন্য দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে নাকি তারা অভিবাসনের দিকে ঝুঁকবে। বেসরকারি পুঁজি এই প্রশিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে একটি নির্ধারক ভূমিকা পালন করবে। জাপানি সংস্থাগুলি ঘানায় ১০০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে বলে আশা করা হচ্ছে, যা এই উদ্যোগের জন্য একটি ইতিবাচক লক্ষণ।
এই উদ্যোগটি আফ্রিকার তরুণদের জন্য একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এটি কেবল প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করবে না, বরং মহাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতাকেও শক্তিশালী করবে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে, ঘানা এবং অন্যান্য আফ্রিকান দেশগুলি বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তিগত অগ্রগতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে এবং তাদের তরুণ জনগোষ্ঠীকে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত করতে পারবে।