দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের হাইকিন ROV-এর যুগান্তকারী অভিযান

সম্পাদনা করেছেন: S Света

চীনের নিজস্ব প্রযুক্তিতে তৈরি হাইকিন (Haiqin) নামক রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকেল (ROV) সম্প্রতি দক্ষিণ চীন সাগরে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈজ্ঞানিক অভিযানে অংশ নিয়েছে। সাংহাই জিয়াও টং বিশ্ববিদ্যালয় (Shanghai Jiao Tong University) দ্বারা ডিজাইন ও নির্মিত এই অত্যাধুনিক যানটি ৪,১৪০ মিটার গভীরতায় পৌঁছেছে, যা গভীর সমুদ্র গবেষণায় চীনের সক্ষমতাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এই অভিযানটি শুধু হাইকিন ROV-এর পরীক্ষামূলক যাত্রাই ছিল না, বরং এটি ছিল একই সাথে দুটি ভিন্ন গভীর সমুদ্রের মানববিহীন সাবমার্সিবলের সমন্বিত কার্যক্রমের প্রথম উদাহরণ, যেখানে হাইকিন-এর সাথে হাইদোউ-১ (Haidou-1) নামক আরেকটি যানও মোতায়েন করা হয়েছিল।

হাইকিন ROV, যা ৬,০০০ মিটার পর্যন্ত গভীরে ডুব দিতে সক্ষম, এটি একটি ৩.৬ টন ওজনের যান। এতে রয়েছে উচ্চ-সংজ্ঞাযুক্ত ক্যামেরা, রোবোটিক আর্ম, সোনার সিস্টেম এবং বিভিন্ন সেন্সর, যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে দিক নিয়ন্ত্রণ এবং নির্ভুলভাবে স্থির থাকার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছে। এই অভিযানের মূল উদ্দেশ্য ছিল গভীর সমুদ্রের জৈবিক নমুনা এবং পলল সংগ্রহ করা, যা বিজ্ঞানীরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন। এই নমুনাগুলো গবেষণা জাহাজ ঝোং শান দা জুয়ে (Zhong Shan Da Xue)-তে নিয়ে আসা হয়েছে।

এই মিশনের একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো হাইদোউ-১ (Haidou-1) নামক ফুল-ওশান-ডেপথ অটোনোমাস এবং রিমোটলি অপারেটেড ভেহিকেল (ARV)-এর একই সময়ে মোতায়েন। এটি একটি চীনা গবেষণা জাহাজ থেকে দুটি ভিন্ন গভীর সমুদ্রের মানববিহীন সাবমার্সিবলের সমন্বিত বৈজ্ঞানিক কার্যক্রম পরিচালনার প্রথম ঘটনা। এই সাফল্য চীনের গভীর সমুদ্র অনুসন্ধান প্রযুক্তিতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে।

চীনের গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে এই ধরনের অভিযান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ চীন সাগর সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্য এবং খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। এই অভিযানগুলো এই অঞ্চলের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং ভূতাত্ত্বিক গঠন সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য সংগ্রহে সহায়তা করে। অতীতে, চীনের 'ফেনডোজহে' (Fendouzhe) নামক মানবচালিত সাবমার্সিবলটি মারিয়ানা ট্রেঞ্চের ১১,০০০ মিটার গভীরে পৌঁছে বিশ্ব রেকর্ড করেছে, যা চীনের সামুদ্রিক প্রযুক্তির সক্ষমতার একটি বড় উদাহরণ। হাইদোউ-১ (Haidou-1) নিজেও ১০,৯০০ মিটারের বেশি গভীরতায় ডাইভ করে বিশ্ব রেকর্ড স্থাপন করেছে।

এই প্রযুক্তিগত অগ্রগতিগুলো চীনের মহাকাশ গবেষণার পাশাপাশি সমুদ্র গবেষণাতেও তাদের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বিস্তার করছে। এই অভিযানগুলো কেবল বৈজ্ঞানিক জ্ঞান বৃদ্ধিই করে না, বরং গভীর সমুদ্রের সম্পদ আহরণ এবং পরিবেশগত পর্যবেক্ষণের নতুন দ্বার উন্মোচন করে। এই ধরনের সমন্বিত অভিযানগুলো ভবিষ্যতে আরও জটিল এবং গভীর সমুদ্র অনুসন্ধানের পথ প্রশস্ত করবে, যা মানবজাতির জ্ঞান এবং প্রযুক্তির সীমাকে প্রসারিত করতে সহায়ক হবে।

উৎসসমূহ

  • News.az

  • China's new deep-sea explorer Haiqin completes mission in South China Sea

  • China's new deep-sea explorer Haiqin completes mission in South China Sea

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।