বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট এখন কেবল পর্বতারোহীদের রোমাঞ্চকর অভিযানের স্থানই নয়, এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার এক গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে, নেপালের কর্তৃপক্ষ এবং স্থানীয় কোম্পানিগুলো ভারী-উৎপাদনকারী ড্রোন ব্যবহার করে এভারেস্টের আরোহণ ক্যাম্পগুলো থেকে বর্জ্য অপসারণের এক উদ্ভাবনী পদ্ধতি গ্রহণ করেছে। এই প্রযুক্তি কেবল পরিবেশের সুরক্ষাই করছে না, বরং শেরপা এবং পর্বতারোহীদের নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করছে। এপ্রিল ২০২৪ সালে পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হওয়া এই উদ্যোগটি বর্তমানেও চলমান এবং ২০২৫ সালের জন্য আরও সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা রয়েছে।
ড্রোনগুলো, বিশেষ করে ডিজেআই ফ্লাইকার্ট ৩০ (DJI FlyCart 30) মডেল, প্রতি ফ্লাইটে প্রায় ৩০ কেজি পর্যন্ত বর্জ্য বহন করতে সক্ষম। এই ড্রোনগুলো ক্যাম্প ১ (৬,০৬৫ মিটার উচ্চতায়) থেকে বর্জ্য সংগ্রহ করে বেস ক্যাম্প পর্যন্ত পৌঁছে দিচ্ছে। এই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে পূর্বে শেরপদের যে ঝুঁকিপূর্ণ এবং সময়সাপেক্ষ কাজ করতে হতো, তা এখন অনেক সহজ ও নিরাপদ হয়েছে। শুধু বর্জ্য অপসারণই নয়, ড্রোনগুলো এখন শেরপদের জন্য অক্সিজেন, দড়ি এবং অন্যান্য জরুরি সরঞ্জাম সরবরাহেও ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া, খুম্বু হিমবাহের (Khumbu Icefall) মতো বিপজ্জনক অঞ্চলে নিরাপদ পথ খুঁজে বের করতেও ড্রোন সহায়তা করছে।
মাউন্ট এভারেস্টের বর্জ্য সমস্যাটি দীর্ঘদিনের। পূর্বে, শেরপাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই বর্জ্য বহন করতে হতো, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক ছিল। বিশেষ করে খুম্বু হিমবাহের মতো স্থানে, যেখানে বরফ ধস এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি প্রবল, সেখানে এই কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। ২০১৯ সালের এক সমীক্ষা অনুযায়ী, প্রতি বছর প্রায় ২৬,৫০০ পাউন্ড মানব বর্জ্য পর্বতে জমা হয়। পরিবেশের উপর এই বর্জ্যের প্রভাব কমাতে এবং পর্বতারোহীদের নিরাপত্তা বাড়াতে এই ড্রোন প্রযুক্তি এক যুগান্তকারী সমাধান এনেছে।
ডিজেআই (DJI) এবং নেপালের এয়ারলিফট টেকনোলজি (Airlift Technology) এর মতো সংস্থাগুলোর অংশীদারিত্বে এই প্রযুক্তি বাস্তবায়িত হচ্ছে। ডিজেআই-এর এই ড্রোনগুলো -১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায়, কম অক্সিজেন এবং উচ্চ বাতাসের মধ্যেও স্থিতিশীলভাবে কাজ করতে সক্ষম। যেখানে পূর্বে শেরপদের ৬-৮ ঘণ্টা সময় লাগত, সেখানে ড্রোনগুলো মাত্র ৬-১২ মিনিটে এই কাজটি সম্পন্ন করতে পারছে। এই প্রযুক্তি কেবল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রেই নয়, বরং পর্বতারোহণের সামগ্রিক নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা বৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি ভবিষ্যতে হিমালয়ের অন্যান্য পর্বতমালায়ও প্রয়োগের সম্ভাবনা রয়েছে, যা এই অঞ্চলের পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় এক নতুন আশা জাগাচ্ছে।