অস্ট্রেলিয়ায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিতর্ক চলছে। শ্রমিক ইউনিয়নগুলো কর্মীদের সুরক্ষার জন্য কঠোর নিয়মাবলী প্রণয়নের আহ্বান জানাচ্ছে, অন্যদিকে ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো উদ্ভাবনে বাধা সৃষ্টির আশঙ্কা প্রকাশ করছে। অস্ট্রেলিয়ান সরকার এই দুই পক্ষের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করছে।
অস্ট্রেলিয়ান কাউন্সিল অফ ট্রেড ইউনিয়নস (ACTU) প্রস্তাব করেছে যে, নিয়োগকর্তাদের এআই প্রযুক্তি চালু করার আগে কর্মীদের সাথে পরামর্শ করতে হবে। এই 'এআই বাস্তবায়ন চুক্তি' (AI Implementation Agreements) কর্মীদের চাকরির নিরাপত্তা, দক্ষতা উন্নয়ন, পুনঃপ্রশিক্ষণ, স্বচ্ছতা এবং ডেটা সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো নিশ্চিত করবে। ACTU-এর সহকারী সেক্রেটারি জোসেফ মিচেল বলেছেন, "আমাদের ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত নয়" এই নীতিতে বিশ্বাসী তারা।
অন্যদিকে, অস্ট্রেলিয়ান ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ (Ai Group)-এর মতো ব্যবসায়িক সংগঠনগুলো, যার প্রধান নির্বাহী ইনেস উইলক্স, সতর্ক করেছেন যে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ উদ্ভাবন, উৎপাদনশীলতা এবং অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। তারা মনে করে, এই ধরনের কঠোর নিয়মাবলী প্রযুক্তি গ্রহণের গতি কমিয়ে দিতে পারে এবং অস্ট্রেলিয়ান ব্যবসাকে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিতে পারে।
অস্ট্রেলিয়ার ট্রেজারার জিম চালমার্স এই বিতর্কে একটি "যুক্তিসঙ্গত মধ্যপন্থা" অবলম্বনের উপর জোর দিয়েছেন। তিনি বিশ্বাস করেন যে, এআই-এর সুবিধা এবং ঝুঁকিগুলির মধ্যে একটি সঠিক ভারসাম্য বজায় রাখা সম্ভব। তাঁর মতে, এআই অস্ট্রেলিয়ার শ্রম উৎপাদনশীলতা ৪ শতাংশের বেশি বাড়াতে পারে, তবে এর সুবিধাগুলি সমানভাবে বণ্টিত হওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
এই আলোচনার প্রেক্ষাপটে, অস্ট্রেলিয়ান সরকার একটি জাতীয় এআই সক্ষমতা পরিকল্পনা (National AI Capability Plan) তৈরি করছে, যা বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শিল্পের সক্ষমতা বাড়ানো এবং কর্মীদের এআই-সম্পর্কিত দক্ষতা উন্নয়নের উপর আলোকপাত করবে। অস্ট্রেলিয়ার প্রোডাক্টিভিটি কমিশন (Productivity Commission) একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, এআই ২০৩০ সালের মধ্যে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিতে অতিরিক্ত ১১৬ বিলিয়ন ডলার যোগ করতে পারে, তবে এটি নির্ভর করে সরকার যেন প্রযুক্তিকে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে বাধাগ্রস্ত না করে।
অস্ট্রেলিয়ান সংসদের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, প্রায় ২.৭ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান চাকরির উপর অটোমেশনের ঝুঁকি রয়েছে ২০৩৫ সাল নাগাদ, তবে কর্মীদের দক্ষতা উন্নয়নে বিনিয়োগের মাধ্যমে দ্বিগুণ সংখ্যক নতুন চাকরি তৈরি করা সম্ভব। কিছু গবেষণা বলছে যে, জেনারেটিভ এআই বর্তমানে কাজের ৩০% ঘন্টা পর্যন্ত স্বয়ংক্রিয় করতে পারে, এবং কম বেতনের কর্মীরা উচ্চ বেতনের কর্মীদের তুলনায় এআই-এর কারণে চাকরি হারানোর ঝুঁকিতে ১৪ গুণ বেশি।
এই বিতর্কটি অস্ট্রেলিয়ার কর্মসংস্থান এবং অর্থনীতির ভবিষ্যৎ গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় নির্দেশ করে। একদিকে যেমন প্রযুক্তির অগ্রগতি উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির সম্ভাবনা তৈরি করছে, তেমনই অন্যদিকে কর্মীদের অধিকার এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও সমানভাবে জরুরি। সরকার, ইউনিয়ন এবং ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে চলমান আলোচনা এই জটিল পরিস্থিতি মোকাবেলায় একটি সম্মিলিত সমাধানের পথ খুঁজে বের করার উপর জোর দিচ্ছে।