ইস্তাম্বুল, ৬ আগস্ট ২০২৫: তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে দশটি গুরুত্বপূর্ণ সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে আরও গভীর করার লক্ষ্যে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই অনুষ্ঠানে তুরস্কের উপ-বাণিজ্যমন্ত্রী ভোলকান আগার এবং সিরিয়ার অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্য মন্ত্রী মুহাম্মদ নিদাল আল-গারিব সহ উভয় দেশের ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এই চুক্তিগুলির পটভূমিতে রয়েছে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের অর্থনৈতিক সম্পর্ক, যা ২০০৪ সালে স্বাক্ষরিত এবং ২০০৭ সালে কার্যকর হওয়া মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) দিয়ে শুরু হয়েছিল। তবে, ২০১১ সালে রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেই চুক্তি স্থগিত হয়ে যায়। সম্প্রতি, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের নতুন ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, ১লা আগস্ট, ২০২৫ থেকে তুরস্কের বিমান সংস্থা আনালিয়াফের বিমান সিরিয়ার আলেপ্পোতে পুনরায় ফ্লাইট চালু করেছে এবং ২রা আগস্ট থেকে তুরস্ক আজারবাইজান ও কাতারের সহায়তায় সিরিয়ায় প্রাকৃতিক গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু করেছে। এই পদক্ষেপগুলি দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত বহন করে।
এই সমঝোতা স্মারকগুলির পাশাপাশি, ৫ই আগস্ট, ২০২৫ তারিখে আঙ্কারায় তুরস্ক-সিরিয়া যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিটি (ETOK) প্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়। এই কমিটি উভয় দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক পরিচালনার জন্য একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে কাজ করবে। ৬ই আগস্ট ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত অনুষ্ঠানে, ফরেন ইকোনমিক রিলেশনস বোর্ড (DEİK) এবং উভয় দেশের বিভিন্ন চেম্বার অফ কমার্স সহ প্রধান স্বাক্ষরকারী সংস্থাগুলি এই দশটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করে। এর মধ্যে রয়েছে DEİK এবং দামেস্ক চেম্বার অফ কমার্স, আলেপ্পো চেম্বার অফ কমার্স, এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক সংস্থাগুলির মধ্যে চুক্তি। এছাড়াও, তুরস্ক-সিরিয়া ব্যবসায়িক পরিষদ পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে, যা বেসরকারি খাতের মধ্যে যোগাযোগ ও প্রকল্প উন্নয়নে সহায়তা করবে। এই চুক্তিগুলির মূল লক্ষ্য হলো দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বৃদ্ধি করা এবং আঞ্চলিক উন্নয়নে অবদান রাখা। গত বছর (২০২৪) দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, এবং ২০২৫ সালের প্রথম সাত মাসে তা ১.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। নতুন লক্ষ্যমাত্রা হলো এই বাণিজ্য ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত করা। এই চুক্তিগুলি সিরিয়ার পুনর্গঠন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করতে এবং উভয় দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সিরিয়ার অর্থনীতি ও শিল্পমন্ত্রী আল-গারিব তুরস্ককে একটি কৌশলগত অংশীদার হিসেবে উল্লেখ করে যৌথ উৎপাদন, সমন্বিত বাজার এবং পারস্পরিক বিনিয়োগের উপর জোর দিয়েছেন। তুরস্ক ও সিরিয়ার মধ্যে স্বাক্ষরিত এই দশটি সমঝোতা স্মারক এবং যৌথ অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য কমিটি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ কেবল দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্ককেই শক্তিশালী করবে না, বরং সমগ্র অঞ্চলের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং সমৃদ্ধিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। এই পদক্ষেপগুলি দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী সহযোগিতার একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।