জাতিসংঘের স্থলবেষ্টিত উন্নয়নশীল দেশসমূহের (LLDC3) তৃতীয় সম্মেলনে মরক্কোর রাষ্ট্রদূত ওমর হিলালে স্থলবেষ্টিত আফ্রিকান দেশগুলোর প্রতি মরক্কোর সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ-দক্ষিণ ও ত্রিদেশীয় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর মাধ্যমে আঞ্চলিক সংহতি ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত করার ওপর জোর দেন। রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদের নেতৃত্বে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে চালু হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগের লক্ষ্য হলো সাহেল অঞ্চলের দেশগুলো—মালি, বুর্কিনা ফাসো এবং নাইজার—আটলান্টিক মহাসাগরে প্রবেশাধিকার লাভ করা। এই প্রকল্পের মাধ্যমে মরক্কো তার অবকাঠামোগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে এই দেশগুলোর অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে এবং আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করতে চায়। এই উদ্যোগটি সাহেল অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য একটি নতুন বাণিজ্যিক পথ খুলে দেবে, যা তাদের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশাধিকার উন্নত করবে।
এই উদ্যোগটি একটি বৃহত্তর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। মালি, বুর্কিনা ফাসো এবং নাইজার ২০২৩ সালে অর্থনৈতিক সম্প্রদায় অফ পশ্চিম আফ্রিকান রাজ্য (ECOWAS) থেকে বেরিয়ে আসার পর মরক্কোর এই প্রস্তাব তাদের জন্য একটি বিকল্প বাণিজ্যিক পথ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। এই দেশগুলো বর্তমানে রাশিয়ার সাথে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করছে এবং পশ্চিমী দেশগুলো থেকে দূরত্ব বজায় রাখছে। এই পরিস্থিতিতে, মরক্কোর এই উদ্যোগ কেবল অর্থনৈতিক সংযোগই নয়, বরং এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে এবং সন্ত্রাসবাদ ও অবৈধ পাচারের মতো সমস্যা মোকাবিলায়ও সহায়ক হবে। মরক্কো এই উদ্যোগের মাধ্যমে সাহেল-সাহারা অঞ্চলে তার প্রভাব বাড়াতে এবং আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী আলজেরিয়ার প্রভাবকে প্রতিহত করতে চাইছে, বিশেষ করে জ্বালানি পরিবহন রুটের ক্ষেত্রে। এই প্রকল্পের অধীনে, মরক্কো তার আটলান্টিক বন্দরগুলোর আধুনিকীকরণের মাধ্যমে সাহেল দেশগুলোকে বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের সাথে সংযুক্ত করার পরিকল্পনা করেছে। ডখলা আটলান্টিক বন্দরের মতো অবকাঠামোগত উন্নয়ন ২০২৯ সালের মধ্যে চালু হওয়ার কথা রয়েছে। এই উদ্যোগের আনুমানিক নির্মাণ ব্যয় প্রায় ১.৪ বিলিয়ন ডলার এবং ২০২৮ সালের মধ্যে এটি চালু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। মালি, বুর্কিনা ফাসো এবং নাইজারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা ২০২৫ সালের এপ্রিলে রাজা ষষ্ঠ মোহাম্মদের সাথে এক বৈঠকে এই উদ্যোগকে ত্বরান্বিত করার জন্য তাদের পূর্ণ সমর্থন ও অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। যদিও নিরাপত্তা ও লজিস্টিকসের মতো কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবে এই উদ্যোগটি আঞ্চলিক সংহতি ও উন্নয়নের জন্য একটি শক্তিশালী অনুঘটক হিসেবে কাজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।