ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচার আদালত (CJEU) আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণের সময় পোষা প্রাণীদের আইনি অবস্থান সংক্রান্ত একটি যুগান্তকারী রায় দিয়েছে। আদালতের এই সিদ্ধান্ত অনুসারে, যে সকল পোষা প্রাণী কার্গো হোল্ড বা মালবাহী অংশে পরিবহন করা হয়, পরিবহনের সময় তাদের ক্ষয়ক্ষতি বা হারানোর ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণের সীমা নির্ধারণের জন্য সেগুলিকে নিবন্ধিত লাগেজের সমতুল্য হিসাবে বিবেচনা করা হবে। পলিটিকো (Politico) প্রকাশনার মতে, এই রায়ের ফলে পোষা প্রাণীর মালিকদের জন্য তাদের প্রিয় প্রাণীর ক্ষতির ক্ষেত্রে উচ্চতর ক্ষতিপূরণ দাবি করা আরও কঠিন হয়ে উঠবে। এই সিদ্ধান্তটি বিমান সংস্থাগুলির দায়িত্ব এবং যাত্রীদের অধিকারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে, যা আইনি কাঠামোকে আরও সুসংগঠিত করেছে।
২০২৫ সালের ১৬ অক্টোবর গৃহীত এই রায়টি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচারব্যবস্থায় বিমান পরিবহনকারীদের দায়বদ্ধতার ক্ষেত্রে আইনি অবস্থানকে স্পষ্ট করে তুলেছে। এই মামলাটি ২০১৯ সালের একটি ঘটনার ফলস্বরূপ শুরু হয়েছিল, যা আদালতের মনোযোগ আকর্ষণ করে। সেই সময় বুয়েনোস আইরেস থেকে বার্সেলোনাগামী একটি ফ্লাইটে ট্রানজিটের সময় ‘মোনা’ নামের একটি কুকুর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায়। কুকুরটির মালিক ছিলেন ফেলিসসিমা। মালিক এই ক্ষতির জন্য ৫,০০০ ইউরো অ-বস্তুগত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিলেন। তবে, উচ্চতর কভারেজ সীমা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে মূল বাধা ছিল প্রাণীটির "বিশেষ মূল্য" সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না থাকা। এই ঘটনাটিই আদালতের সামনে একটি জটিল আইনি প্রশ্ন উত্থাপন করে: পোষা প্রাণীর আবেগগত মূল্য কি লাগেজের আইনি সংজ্ঞার ঊর্ধ্বে?
ইউরোপীয় ইউনিয়নের আদালত ১৯৯৯ সালের মন্ট্রিল কনভেনশনের নিয়মাবলী, যা লাগেজ পরিবহন নিয়ন্ত্রণ করে, এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রাণী সুরক্ষার ক্রমবর্ধমান মানদণ্ডগুলির মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করেছে। CJEU-এর রায় নিশ্চিত করেছে যে, মালবাহী অংশে পরিবাহিত প্রাণীদের ক্ষেত্রেও লাগেজের জন্য পরিবহনকারীর দায়বদ্ধতার সীমা নির্ধারণকারী কনভেনশনের বিধানগুলি প্রযোজ্য হবে। এই রায় ক্ষতিপূরণের ক্ষেত্রে একটি অভিন্ন পদ্ধতির সূচনা করে, যেখানে মালিক কর্তৃক অতিরিক্ত ঘোষণার পদক্ষেপ না নেওয়া হলে সাধারণ লাগেজের জন্য নির্ধারিত মানদণ্ডই প্রযোজ্য হবে। এর মাধ্যমে আদালত স্পষ্ট করেছে যে, যদি মালিক বিশেষ মূল্য ঘোষণা না করেন, তবে পোষা প্রাণী আইনগতভাবে নিবন্ধিত লাগেজের মতোই বিবেচিত হবে।
এই গুরুত্বপূর্ণ নজিরটি যাত্রী এবং বিমান সংস্থা উভয়ের জন্যই ইউরোপে পরিবহনকারীদের আর্থিক দায়বদ্ধতা সম্পর্কে আইনি নিশ্চয়তা তৈরি করেছে। CJEU-এর সিদ্ধান্ত, লাগেজ কনভেনশনের উপর জোর দিয়ে, প্রাণীর মানসিক বা আবেগগত মূল্য থেকে মনোযোগ সরিয়ে কার্গো হোল্ডে পরিবহনের সময় আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পদ্ধতির দিকে নিয়ে এসেছে। এটি আন্তর্জাতিক বিমান ভ্রমণের পরিকল্পনা করা পোষা প্রাণীর মালিকদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতিতে তাদের অধিকারের সর্বোচ্চ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে, তাদের উচিত বিমান সংস্থাগুলির ঘোষণা এবং প্যাকেজিং সংক্রান্ত সমস্ত প্রয়োজনীয়তা আগে থেকেই ভালোভাবে জেনে নেওয়া এবং তা যথাযথভাবে পালন করা। এই রায়টি মনে করিয়ে দেয় যে, আইনগত সুরক্ষার জন্য কেবল আবেগ যথেষ্ট নয়, বরং যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অপরিহার্য, যাতে ভবিষ্যতে কোনো অপ্রত্যাশিত ক্ষতি হলে আইনি প্রতিকার পাওয়া সহজ হয়।