বার্লিন, ৮ আগস্ট ২০২৫ – জার্মানি তাৎক্ষণিকভাবে এবং পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত গাজা উপত্যকায় ব্যবহার করা যেতে পারে এমন সমস্ত সামরিক সরঞ্জামের রপ্তানি স্থগিত করার ঘোষণা দিয়েছে। জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ শুক্রবার এই গুরুত্বপূর্ণ নীতি পরিবর্তনের কথা জানান। ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার গাজা শহর নিয়ন্ত্রণের পরিকল্পনা অনুমোদনের প্রতিক্রিয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চ্যান্সেলর মের্জ উল্লেখ করেছেন যে, হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে জার্মানি স্বীকার করলেও, সাম্প্রতিক সামরিক পদক্ষেপগুলি জিম্মিদের মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির মতো গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য অর্জনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। তিনি গাজার মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন এবং জাতিসংঘ সংস্থা ও এনজিও সহ সকল সংস্থার জন্য ত্রাণ সরবরাহের অবাধ প্রবেশাধিকারের প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক অবিলম্বে ইসরায়েলের গাজা দখলের পরিকল্পনার অবসান ঘটাতে জরুরি আবেদন জানিয়েছেন। তুর্ক সতর্ক করেছেন যে এই ধরনের পদক্ষেপ অনিবার্যভাবে আরও প্রাণহানি, দুর্ভোগ এবং ধ্বংসযজ্ঞের দিকে নিয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন যে এই পরিকল্পনা আন্তর্জাতিক বিচার আদালতের (ICJ) নির্দেশনার পরিপন্থী, যা ইসরায়েলকে তার দখলদারিত্ব শেষ করার আহ্বান জানিয়েছে। এটি দ্বি-রাষ্ট্র সমাধানের সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করে এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার লঙ্ঘন করে। এই স্থগিতাদেশ জার্মানির ইসরায়েলের প্রতি দীর্ঘদিনের শক্তিশালী সমর্থনের একটি উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। এই সিদ্ধান্তটি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর জোটের মধ্যে থাকা চরম ডানপন্থী গোষ্ঠীগুলির চাপের মুখে এসেছে, যারা সামরিক সতর্কতার মুখেও গাজা সম্পূর্ণ দখলের পক্ষে ছিল। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে জার্মানি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পর ইসরায়েলের দ্বিতীয় বৃহত্তম সামরিক আমদানিকারক ছিল, যেখানে ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের মে মাস পর্যন্ত অনুমোদিত রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৮৫.১ মিলিয়ন ইউরো। জার্মানিতে জনমতও অস্ত্র রপ্তানির উপর কঠোর সীমা আরোপের পক্ষে ছিল; জুন ২০২৫ সালের একটি জরিপে দেখা গেছে যে ৭৩% জার্মান ইসরায়েলে অস্ত্র রপ্তানির উপর কঠোর সীমা আরোপের পক্ষে এবং প্রায় ৩০% সম্পূর্ণ স্থগিতের পক্ষে ছিল।
আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া মিশ্র ছিল। যুক্তরাজ্য, স্পেন এবং তুরস্কের নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার কূটনৈতিক সমাধানের আহ্বান জানিয়েছেন, সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন যে আরও সংঘাত কেবল রক্তপাত বাড়াবে। স্পেন আরও ধ্বংসযজ্ঞের সম্ভাবনা তুলে ধরেছে, যখন তুরস্ক ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী নীতিকে উদ্বেগের কারণ হিসেবে অভিহিত করেছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। অস্ট্রেলিয়াও জোর দিয়েছে যে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সীমানার মধ্যে ইসরায়েল এবং একটি ভবিষ্যৎ ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সহাবস্থানই দীর্ঘস্থায়ী শান্তির একমাত্র পথ। পরিস্থিতি এখনও পরিবর্তনশীল, এবং উত্তেজনা প্রশমন ও সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক আলোচনা ও কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।