দক্ষিণ কোরিয়া মিয়ানমারের মানবিক সংকটে ডব্লিউএফপি-র রিচ (REACH) প্রকল্পে ১০ মিলিয়ন ডলার অনুদান

সম্পাদনা করেছেন: Ирина iryna_blgka blgka

মিয়ানমারের ক্রমবর্ধমান মানবিক সংকট মোকাবিলায় একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, দক্ষিণ কোরিয়া প্রজাতন্ত্র (ROK) এবং জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) 'রিচ' (REACH - Responding with Emergency Assistance for Conflict-affected Households) নামক একটি নতুন উদ্যোগ চালু করেছে। এই কর্মসূচিটি সংঘাত ও গত মার্চ ২০২৫-এর বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জরুরি সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে কাজ করবে। ২০২৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর থেকে এই উদ্যোগটি কার্যকর হয়েছে।

মিয়ানমারের পরিস্থিতি অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এটি দেশটির সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ মানবিক সংকট। রাজনৈতিক অস্থিরতা, সংঘাত, এবং অর্থনৈতিক পতনের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ চরম দুর্দশার শিকার। ২০২১ সালের প্রথম দিক থেকে একটি মৌলিক খাদ্য ঝুড়ির দাম চারগুণ বেড়েছে, যার ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে খাদ্য সংগ্রহ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। এই সংকট আরও তীব্র হয়েছে মার্চ ২০২৫-এর শক্তিশালী ভূমিকম্পের কারণে, যা অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করেছে এবং জীবনযাত্রাকে আরও দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই দুর্যোগের ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সাধিত হয়েছে।

২০২৫ সাল নাগাদ, মিয়ানমারের প্রায় ১৯.৯ মিলিয়ন (প্রায় ২ কোটি) মানুষ মানবিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তার সম্মুখীন হবে, যা দেশটির জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ। এছাড়াও, ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ ৩.৫ মিলিয়ন (৩৫ লক্ষ) মানুষ অভ্যন্তরীণভাবে বাস্তুচ্যুত হয়েছে, যারা অত্যন্ত অনিশ্চিত এবং কঠিন পরিস্থিতিতে বসবাস করছে। বর্তমানে, মিয়ানমার বিশ্বব্যাপী গুরুতর ক্ষুধার্ত মানুষের সংখ্যার দিক থেকে পঞ্চম স্থানে রয়েছে, যেখানে ১৬.৭ মিলিয়ন (প্রায় ১ কোটি ৬৭ লক্ষ) মানুষ তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে, যা ২০২৪ সালের ১৩.৩ মিলিয়ন (প্রায় ১ কোটি ৩৩ লক্ষ) থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের অনুদান ডব্লিউএফপি-কে সংঘাত ও ভূমিকম্পে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সম্প্রদায়গুলোতে জীবন রক্ষাকারী খাদ্য ও নগদ অর্থ সরবরাহ করতে সক্ষম করবে। 'রিচ' উদ্যোগের মাধ্যমে, ডব্লিউএফপি প্রায় ৩০০,০০০ মানুষকে দুই মাসের খাদ্য ও/অথবা নগদ সহায়তা প্রদান করবে। এছাড়াও, ২৪,০০০ গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী মহিলা এবং শিশুরা অপুষ্টি প্রতিরোধ ও চিকিৎসার জন্য বিশেষ পুষ্টি সহায়তা পাবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার এই পদক্ষেপ তাদের বৈশ্বিক মানবিক সহায়তার প্রতিশ্রুতির একটি অংশ, যা বিশ্বজুড়ে দারিদ্র্য দূরীকরণ এবং স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে তাদের সক্রিয় ভূমিকার প্রতিফলন। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ডব্লিউএফপি-কে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি অনুদান দিয়েছিল, যা তাদের শীর্ষ পাঁচ সরকারি দাতাদের মধ্যে অন্যতম করে তুলেছে। এটি কেবল একটি আর্থিক সহায়তা নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক সম্পর্কেরও প্রতীক, কারণ মিয়ানমার একসময় দক্ষিণ কোরিয়াকে চাল সহায়তা পাঠিয়েছিল। এই অনুদানটি দক্ষিণ কোরিয়ার একটি বিশ্ব নেতা হিসেবে খাদ্য নিরাপত্তায় উত্তরণের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার মিয়ানমারে নিযুক্ত চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স, এইচ.ই. মিস্টার বায়ে বাইয়ংসু, এই কঠিন সময়ে মিয়ানমারের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য দেশটির প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন যে এই প্রকল্পটি জরুরি চাহিদা পূরণ করবে এবং দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতা ও আশা জাগিয়ে তুলবে।

ডব্লিউএফপি-র মিয়ানমারে প্রতিনিধি ও কান্ট্রি ডিরেক্টর মাইকেল ডানফোর্ড এই অংশীদারিত্বের তাৎপর্য তুলে ধরে বলেছেন, "এই 'রিচ' প্রকল্পের সূচনা দক্ষিণ কোরিয়ার অনুপ্রেরণাদায়ক রূপান্তরের আরেকটি মাইলফলক, যেখানে তারা ১৯৬০ থেকে ১৯৮০-এর দশকে ডব্লিউএফপি-র সহায়তা গ্রহণকারী থেকে খাদ্য নিরাপত্তায় একটি বিশ্ব নেতা হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করেছে।" তিনি আরও স্মরণ করিয়ে দেন যে মিয়ানমার একসময় দক্ষিণ কোরিয়াকে চাল সহায়তা পাঠিয়েছিল, যা দুই দেশের মধ্যেকার ঐতিহাসিক সম্পর্ককে আরও গভীর করে।

ডব্লিউএফপি স্থানীয় অংশীদার এবং এনজিও-দের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করে সরাসরি অভাবী মানুষের কাছে এই সহায়তা পৌঁছে দেবে। এই অনুদানটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কারণ পূর্বে তহবিলের ঘাটতির কারণে ডব্লিউএফপি প্রায় ১০ লক্ষ মানুষকে জরুরি সহায়তা কমাতে বাধ্য হয়েছিল। দক্ষিণ কোরিয়ার এই নতুন তহবিল, বিশেষ করে দুর্গম অঞ্চলে যেখানে ক্ষুধার মাত্রা সবচেয়ে বেশি, সেখানে অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য সহায়তা পুনরুদ্ধারে সহায়তা করবে।

এই অংশীদারিত্বটি কেবল জরুরি ত্রাণ সরবরাহই নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর চিত্র তুলে ধরে – কীভাবে একটি দেশ তার অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বব্যাপী মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিতে পারে। এটি পারস্পরিক সহযোগিতা এবং সহানুভূতির মাধ্যমে সংকট মোকাবিলার এক শক্তিশালী বার্তা বহন করে, যা মিয়ানমারের জনগণের জন্য আশার আলো দেখাচ্ছে এবং তাদের স্থিতিশীলতা ও পুনরুদ্ধারের পথে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে।

উৎসসমূহ

  • Mirage News

  • World Food Programme

  • Associated Press

  • Financial Times

  • Associated Press

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।