আল ফাশের পতনের পর সুদানে সংঘাত নিরসনে জাতিসংঘের সংলাপের আহ্বান

সম্পাদনা করেছেন: S Света

উত্তর দারফুরের রাজধানী আল ফাশেরে মানবিক পরিস্থিতি চরম সংকটে পৌঁছানোর প্রেক্ষাপটে, সুদান সংঘাতের পক্ষগুলোর প্রতি অবিলম্বে আলোচনা পুনরায় শুরু করার জন্য জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস জোরালো আহ্বান জানিয়েছেন। এই সহিংসতা বৃদ্ধি থামাতে তিনি ৪ নভেম্বর ২০২৫ তারিখে কাতারে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের শীর্ষ সম্মেলনের সময় এই দাবি জানান। আন্তর্জাতিক সংস্থাটি এই অঞ্চলে বিরাজমান ভয়াবহ পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে, যা বর্তমানে একটি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে।

আল ফাশেরের পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয় যখন দ্রুত সহায়তা বাহিনী (আরএসএফ) শহরটির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এটি ছিল এই অঞ্চলে সুদানি সশস্ত্র বাহিনীর (এসএএফ) শেষ প্রধান দুর্গ, যা ১৮ মাস ধরে অবরোধের মধ্যে ছিল। আরএসএফ কর্তৃক শহরটি দখল করা হয় ২৬-২৭ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে। অঞ্চলটি থেকে আসা প্রমাণাদি গণহত্যা, লক্ষ্যযুক্ত জাতিগত নির্মূলকরণ এবং যৌন সহিংসতার মতো জঘন্য অপরাধের ইঙ্গিত দেয়।

বিশেষ করে ২৮ অক্টোবর ২০২৫ তারিখে সৌদি মাতৃসদনে হামলার ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, এই হামলায় রোগী ও তাদের সহচরসহ ৪৬০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়। গুতেরেস এই যুদ্ধকে একটি “অনিয়ন্ত্রিত সর্পিল” হিসেবে বর্ণনা করেছেন, যা অবিলম্বে কূটনৈতিক হস্তক্ষেপের দাবি রাখে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে।

সহিংসতার এই বৃদ্ধি দুর্ভিক্ষের বিস্তারের সাথে মিলে যায়। জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, আল ফাশের এবং কাডুগলিতে (দক্ষিণ কর্দোফান) দুর্ভিক্ষ পঞ্চম, অর্থাৎ বিপর্যয়কর পর্যায়ে (আইপিসি ফেজ ৫) পৌঁছেছে। সামগ্রিকভাবে সুদানে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে, এবং ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষ সম্পূর্ণ দুর্ভিক্ষের সমতুল্য পরিস্থিতিতে রয়েছে। প্রায় দেড় বছর ধরে আল ফাশের অবরোধের কারণে প্রায় ৩ লক্ষ বাসিন্দা মৌলিক চিকিৎসা সহায়তা এবং খাদ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় (ওএইচসিএইচআর) আরএসএফ কর্তৃক সংঘটিত গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটরের কার্যালয় আল ফাশেরে আরএসএফ-এর নৃশংসতাকে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন যে আরএসএফ কর্তৃক আল ফাশের দখল একটি সন্ধিক্ষণ, যা সুদানকে কার্যত দুটি প্রভাব বলয়ে বিভক্ত করতে পারে। আরএসএফ বেসামরিক নাগরিকদের শহর ছেড়ে যেতে বাধা দিচ্ছে। এদিকে, ইরাক সহ অন্যান্য দেশগুলি বেসামরিক নাগরিকদের হত্যার নিন্দা জানাচ্ছে এবং দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করার প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে আলোচনার আহ্বান জানাচ্ছে।

উৎসসমূহ

  • AIP(Agence Ivoirienne de presse)

  • UN secretary-general warns that war in Sudan is 'spiraling out of control'

  • Famine Spreads to Two More Areas in Sudan, Including City Subject To Militia Atrocities

  • WHO condemns killings of patients and civilians amid escalating violence in El Fasher, Sudan

  • Massacre in el-Fasher: What’s happening in Sudan right now?

  • ICC warns atrocities by paramilitary group in Sudan may constitute war crimes

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।