সুদান: মানবিক সংকটের মাঝে আরএসএফের সম্মতি, ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতি

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

২০২৫ সালের ৭ নভেম্বর সুদানের র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) নীতিগতভাবে একটি মানবিক যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। এই যুদ্ধবিরতির উদ্যোগ নিয়েছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের 'কোয়াড্রিগা' মিত্ররা— সৌদি আরব, মিশর এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। আরএসএফের সম্মতিপ্রাপ্ত এই তিন মাসের চুক্তির মূল লক্ষ্য হলো দীর্ঘস্থায়ী সংঘাতের ভয়াবহ পরিণতি হ্রাস করা এবং বেসামরিক জনগণের কাছে অত্যাবশ্যকীয় সহায়তা পৌঁছে দেওয়ার পথ সুগম করা। এই সিদ্ধান্তটি আসে আরএসএফের সাম্প্রতিক সামরিক সাফল্যের ঠিক পরেই— দীর্ঘ অবরোধের পর ২৬ অক্টোবর, ২০২৫ তারিখে উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল ফাশের দখল করার পর।

তবে, এই যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং চলমান সহিংসতার খবরে ম্লান হয়ে গেছে। এল ফাশের আক্রমণ, যা ছিল এই অঞ্চলে সরকারি বাহিনীর শেষ ঘাঁটি, সেখানে ব্যাপক হত্যাকাণ্ডের প্রমাণ পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানিয়েছে যে শহরটিতে আক্রমণের সময় একটি প্রাক্তন শিশু হাসপাতালে ৪৬০ জনেরও বেশি রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মী নিহত হয়েছেন। ধর্ষণসহ অন্যান্য নৃশংসতার খবর এই যুদ্ধবিরতি ঘোষণার বিষয়ে গভীর সতর্কতার জন্ম দিয়েছে।

আরএসএফ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব গ্রহণ করলেও, সুদানের সশস্ত্র বাহিনী (এসএএফ) এখনও পর্যন্ত কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এর আগে জোর দিয়েছিলেন যে আরএসএফকে সম্পূর্ণরূপে নিরস্ত্র না করা এবং জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত সামরিক অভিযান চলবে। উপরন্তু, ৪ নভেম্বর সুদানের নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা পরিষদ সশস্ত্র বাহিনীকে সমর্থন করার জন্য জনগণের সাধারণ সংহতি ঘোষণা করে, যা এই সংঘাতের গভীরতাকেই তুলে ধরে।

২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে শুরু হওয়া এই সংঘাত বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকটের জন্ম দিয়েছে। আনুমানিক ১৪ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ তাদের ঘরবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। খাদ্য পরিস্থিতি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে: জাতিসংঘ-সমর্থিত বিশ্লেষণ অনুসারে, সারা দেশে ২১ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ তীব্র খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন। এল ফাশের এবং কাদুগলির মতো অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি রেকর্ড করা হয়েছে, যেখানে বাসিন্দারা ঘাস এবং পশুর খাদ্য খেতে বাধ্য হচ্ছে। প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার মানুষ খাদ্যের অভাবের ‘বিপর্যয়কর’ পঞ্চম ধাপে রয়েছে।

এই ঘটনাবলীর পরিপ্রেক্ষিতে, আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর এল ফাশের দখলের পর সংঘটিত গণহত্যা, ধর্ষণ এবং অন্যান্য নৃশংসতার প্রমাণ সংগ্রহ শুরু করেছেন। জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস সহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে চলেছে, কারণ সংকটটি “নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে”। এই সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি, যতই ভঙ্গুর মনে হোক না কেন, মৌলিক চাহিদা পূরণের দিকে মনোযোগ দিতে এবং সংলাপ শুরু করার জন্য একটি সুযোগের জানালা খুলে দিয়েছে।

উৎসসমূহ

  • Al Jazeera Online

  • Al Jazeera

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।