২১শে আগস্ট ২০২৫-এর রাতে রাশিয়া ইউক্রেন জুড়ে এক অভূতপূর্ব এবং ব্যাপক আকাশপথে আক্রমণ চালিয়েছে। এই হামলায় ৫০০-এর বেশি ড্রোন এবং অসংখ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চল সহ বিভিন্ন অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ এবং হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। এই সমন্বিত হামলা যুদ্ধের একটি নতুন এবং উদ্বেগজনক পর্যায় নির্দেশ করে, যা শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টার মধ্যে সংঘাতের তীব্রতা ও জটিলতা তুলে ধরেছে।
ইউক্রেনীয় বিমান বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, রাশিয়ান বাহিনী ৫৪৪টি শাহেদ-টাইপ ড্রোন এবং বিভিন্ন ধরণের ডিকয় ড্রোন সহ মোট ৬১৪টি আকাশ লক্ষ্যবস্তু নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ছিল চারটি খ-৪৭এম২ কিনজাল, দুটি ইস্কান্দার-এম/কেএন-২৩ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ১৯টি খ-১০১ ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং ১৪টি কালিব্র ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। ইউক্রেনীয় বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ৫৪৪টি ড্রোন এবং ৩১টি ক্ষেপণাস্ত্র সফলভাবে প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, যা তাদের প্রতিরক্ষা সক্ষমতার একটি উল্লেখযোগ্য দিক।
পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর লভিভে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় একজন নিহত এবং দুজন আহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন গুরুতর অবস্থায় রয়েছেন। এই হামলায় দুই ডজনেরও বেশি আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, জানালা ভেঙে গেছে এবং ছাদ উড়ে গেছে। লভিভের মেয়র আন্দ্রি সাদোভির মতে, বিস্ফোরণের ঢেউয়ের কারণে অনেক বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই হামলার একটি বিশেষ দিক হলো, লভিভের কাছে একটি আমেরিকান ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানেও আঘাত হেনেছে, যা বেসামরিক অবকাঠামো এবং আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের উপর রাশিয়ার আগ্রাসনের প্রভাবকে স্পষ্ট করে।
পশ্চিমের জাকারপ্যাটিয়া অঞ্চলের মুকাচেভো শহরেও একটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে, যেখানে একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে আঘাত হেনেছে। এই ঘটনায় ১২ জন আহত হয়েছেন এবং একটি বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। শহর কর্তৃপক্ষ বাসিন্দাদের জানালা বন্ধ রাখতে এবং বাড়ির ভিতরে থাকতে সতর্ক করেছে। জাপোরিঝঝিয়া অঞ্চলে, একাধিক শিল্প অবকাঠামো এবং আবাসিক ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে আশেপাশের বাড়িগুলির জানালার ক্ষতি হয়েছে। সুমি এবং চেরনিহিভ অঞ্চলেও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে, যদিও সেখানে ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি।
এই ব্যাপক আক্রমণটি ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে, যা সাধারণত পূর্ব এবং দক্ষিণাঞ্চলের তুলনায় কম লক্ষ্যবস্তু হয়, সেখানে রাশিয়ার কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্দ্রি সিবিহা এই হামলাকে "জনগণের উপর সন্ত্রাস" বলে অভিহিত করেছেন এবং বলেছেন যে এর "কোনও সামরিক যুক্তি বা প্রয়োজনীয়তা নেই", যা এই ধরনের হামলার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, বিপুল সংখ্যক উন্নত অস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অভিভূত করার এবং বেসামরিক জনগণের মধ্যে ভয় ও আতঙ্ক সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছে। যদিও ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লক্ষ্যবস্তু প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, তবে এই ধরনের ধারাবাহিক এবং ব্যাপক আক্রমণ দেশটির অবকাঠামো এবং অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলছে। পূর্বের একটি বড় হামলার (১০ই জুন, ২০২৫) সাথে তুলনা করলে, এই আক্রমণটি যুদ্ধের মাত্রার একটি নতুন উচ্চতা নির্দেশ করে।