রাশিয়ার আর্কটিক এলএনজি ২ প্রকল্প থেকে এশিয়ার দিকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) ট্যাঙ্কারের যাত্রা পুনরায় শুরু হয়েছে, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা কার্যকরভাবে প্রয়োগ করার ক্ষমতাকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছে। এলএনজি ট্যাঙ্কার আইরিস এবং ভোসখোদ, যা পূর্বে যথাক্রমে নর্থ স্কাই এবং নর্থ মাউন্টেন নামে পরিচিত ছিল, তারা ১৫ আগস্ট, ২০২৫ তারিখে উত্তর এশিয়ার দিকে তাদের যাত্রা শুরু করেছে। এই জাহাজগুলি বেশ কয়েক সপ্তাহ ধরে অলস অবস্থায় ছিল এবং এখন তারা উত্তর সমুদ্র পথ (Northern Sea Route) ধরে তাদের যাত্রা অব্যাহত রেখেছে। এই ট্যাঙ্কারগুলি রাশিয়ার 'শ্যাডো ফ্লিট'-এর অংশ, যা আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা এড়াতে পুনঃপতাকাঙ্কিত এবং পুনঃনামাঙ্কিত করা হয়েছে।
এই ঘটনাটি ইউক্রেন যুদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে রাশিয়ার উপর আরোপিত পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন উভয়ই রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানির উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার মধ্যে এলএনজি-ও অন্তর্ভুক্ত। তবে, রাশিয়ার 'শ্যাডো ফ্লিট' ব্যবহার করে এই নিষেধাজ্ঞাগুলি এড়ানোর প্রচেষ্টা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারে জটিলতা সৃষ্টি করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি রাশিয়ার এলএনজি পরিবহনকারী ট্যাঙ্কারগুলির উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ভূখণ্ডে রাশিয়ার এলএনজি রি-লোডিং পরিষেবা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপের উদ্দেশ্য হল রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানি থেকে আয় কমানো এবং তাদের যুদ্ধ অর্থায়নের ক্ষমতাকে সীমিত করা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও রাশিয়ার জ্বালানি খাতের উপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়ার প্রধান তেল প্রযোজক, বীমা কোম্পানি এবং শতাধিক 'শ্যাডো ফ্লিট' জাহাজ। এই পদক্ষেপগুলি রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানির ঝুঁকি বাড়িয়েছে এবং তাদের যুদ্ধ পরিচালনার ক্ষমতাকে আরও সীমিত করার লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। তবে, রাশিয়ার এই 'শ্যাডো ফ্লিট' ব্যবহার করে নিষেধাজ্ঞা এড়ানোর কৌশলগুলি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা কার্যকরীকরণের ক্ষমতাকে একটি কঠিন পরীক্ষার মুখে ফেলেছে। আর্কটিক এলএনজি ২ প্রকল্পটি রাশিয়ার নোভাটেক (Novatek) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং এটি রাশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম এলএনজি প্রকল্প হওয়ার কথা ছিল। তবে, পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে এই প্রকল্পের অগ্রগতিতে উল্লেখযোগ্য বাধা সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে, বরফ-প্রতিরোধী এলএনজি ট্যাঙ্কারের অভাব প্রকল্পের কার্যকারিতা ব্যাহত করছে। কিছু প্রতিবেদন অনুসারে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কারণে দক্ষিণ কোরিয়ার হানওয়া শিপইয়ার্ডে (Hanwha shipyard) নির্মিত ছয়টি বরফ-শ্রেণীর এলএনজি জাহাজ আটকে আছে। এই পরিস্থিতিতে, রাশিয়ার এলএনজি রপ্তানি চালিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা এবং পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করার প্রচেষ্টা একটি চলমান ভূ-রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক লড়াইয়ের চিত্র তুলে ধরেছে। এটি বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের স্থিতিশীলতা এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। রাশিয়ার এই পদক্ষেপগুলি প্রমাণ করে যে তারা নিষেধাজ্ঞা এড়াতে নতুন কৌশল অবলম্বন করতে প্রস্তুত, যা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি সরবরাহ এবং ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্কের উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।