পোলিশ প্রেসিডেন্ট ক্যারোল নাভরোস্কি ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা প্রদানের একটি বিল প্রত্যাখ্যান করেছেন। এই সিদ্ধান্তটি পোল্যান্ডের জাতীয় অগ্রাধিকার এবং ইউক্রেনের সাথে সম্পর্ক নিয়ে একটি রাজনৈতিক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই পদক্ষেপ প্রধানমন্ত্রী ডোনাল্ড টাস্কের সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে এবং পোল্যান্ডের ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি অঙ্গীকারের উপর প্রশ্ন তুলেছে।
আগস্ট ২৫, ২০২৫ তারিখে, প্রেসিডেন্ট নাভরোস্কি একটি সরকারি বিলে ভেটো দেন যা ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য আর্থিক সহায়তা ২০২৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত বাড়ানোর বিধান ছিল। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী, এই সহায়তা সেপ্টেম্বরের শেষে শেষ হওয়ার কথা। নাভরোস্কি যুক্তি দেন যে, পোল্যান্ডে কর্মরত ইউক্রেনীয়দের জন্য শিশু সুবিধা কর্মসংস্থানের উপর নির্ভরশীল হওয়া উচিত। তিনি ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের জন্য বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার উপরও অসন্তোষ প্রকাশ করেন, যেখানে পোলিশ নাগরিকরা আরও কঠোর শর্তের সম্মুখীন হন বলে তিনি মনে করেন।
এই ভেটোর ফলে, পোল্যান্ডের সরকার শরণার্থীদের সহায়তার জন্য বিকল্প সমাধান খুঁজে বের করতে একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। প্রেসিডেন্ট নাভরোস্কি সামাজিক সুবিধা এবং স্বাস্থ্যসেবার পুনর্গঠন, প্রাকৃতিককরণের প্রয়োজনীয়তা কঠোর করা এবং অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের জন্য শাস্তির বিধান বাড়ানোর জন্য নিজস্ব আইন প্রস্তাব করেছেন। এই সিদ্ধান্তটি ইউক্রেনের স্বাধীনতার দিবসের অল্প পরেই নেওয়া হয়েছে, যা দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক এবং জাতিগত উত্তেজনার একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। নাভরোস্কির এই পদক্ষেপকে কেউ কেউ ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদীদের প্রতি তার মনোভাবের প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন, যা অতীতে পোলিশ নাগরিকদের উপর হামলার সাথে জড়িত ছিল।
অর্থনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে, বিভিন্ন প্রতিবেদন অনুসারে, ইউক্রেনীয় শরণার্থীরা পোল্যান্ডের অর্থনীতিতে ইতিবাচক অবদান রেখেছে। তারা কর এবং সামাজিক নিরাপত্তা অবদানের মাধ্যমে যা গ্রহণ করে তার চেয়ে বেশি অর্থ প্রদান করে। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের উপস্থিতি পোল্যান্ডের জিডিপি বৃদ্ধিতে ০.৫-২.৪% অবদান রেখেছে। তবে, সাম্প্রতিক জরিপে দেখা গেছে যে, পোলিশ জনগণের মধ্যে ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের প্রতি সমর্থন হ্রাস পেয়েছে, যেখানে ৫১% মনে করেন যে তাদের জন্য প্রদত্ত সুবিধাগুলি অতিরিক্ত।
এই ভেটো ইউক্রেনের জন্য স্টারলিঙ্ক ইন্টারনেট পরিষেবার অর্থায়নের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে। পোল্যান্ড ইউক্রেনের জন্য স্টারলিংক পরিষেবার অর্থায়ন করে আসছে, যা যুদ্ধের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগ ব্যবস্থা। উপ-প্রধানমন্ত্রী ক্রিস্টোফ গাওকোস্কি সতর্ক করেছেন যে, এই ভেটো ইউক্রেনের ইন্টারনেট সংযোগের জন্য একটি বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে, যা রাশিয়ার জন্য একটি সুবিধা বয়ে আনবে। এই পরিস্থিতি পোল্যান্ডের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিভাজনকে আরও স্পষ্ট করেছে এবং শরণার্থীদের নীতি ও আঞ্চলিক মৈত্রী সম্পর্কে দেশটির ভবিষ্যতের পদ্ধতির উপর গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।