১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে, ফ্রান্স দেশব্যাপী ধর্মঘট ও প্রতিবাদের ঢেউয়ে কার্যত অচল হয়ে পড়ে। প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সরকার কর্তৃক প্রস্তাবিত ব্যয় সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে শ্রমিক ইউনিয়নগুলো এই ধর্মঘটের ডাক দেয়, যা পরিবহন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা এবং সরকারি পরিষেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এই ধর্মঘটে প্রায় ৪ লক্ষাধিক মানুষ দেশজুড়ে বিক্ষোভে সামিল হয়, যা একটি বড় ধরনের গণআন্দোলনের ইঙ্গিত দেয়।
পরিবহন ও বিমান চলাচল ব্যাহত হয়। দেশটির জাতীয় রেল পরিষেবা সংস্থা এসএনসিএফ (SNCF) জানায় যে, নির্ধারিত পরিষেবার মাত্র ৩০% থেকে ৪০% চালু ছিল। হাই-স্পিড টিজিভি (TGV), আঞ্চলিক ট্যার (TER) এবং প্যারিস আরইআর (RER) কমিউটার ট্রেন পরিষেবাগুলি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। প্যারিসে, আরএটিপি (RATP) পরিচালিত মেট্রো, বাস এবং ট্রাম পরিষেবাগুলিতে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে, কিছু রুটে ট্রেন চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় এবং অন্যগুলিতে সীমিত আকারে চলে। শুধুমাত্র স্বয়ংক্রিয় মেট্রো লাইন ১, ৪ এবং ১৪ স্বাভাবিকভাবে চালু ছিল। ফরাসি বিমান ট্রাফিক কন্ট্রোলারদের প্রধান ইউনিয়ন এসএনসিটিএ (SNCTA) ধর্মঘটের ডাক দেওয়ায় প্যারিস-শার্লস ডি গল এবং প্যারিস-ওরলি-এর মতো প্রধান বিমানবন্দরগুলিতে বিলম্ব ও বাতিল হয়।
সারাদেশের সরকারি পরিষেবা ও শিক্ষাব্যবস্থাও এই ধর্মঘটের আওতায় আসে। ফার্মেসিগুলো দেশব্যাপী বন্ধ হয়ে যায়, কেবলমাত্র জরুরি পরিষেবাগুলি চালু থাকে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে সীমিত আকারে কার্যক্রম চলে, যা ছাত্রছাত্রী ও কর্মীদের প্রভাবিত করে। দেশজুড়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা বাজেট বরাদ্দ হ্রাস, সামাজিক কল্যাণ স্থগিত এবং অন্যান্য ব্যয় সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করে। ক্রমবর্ধমান দারিদ্র্য, বৈষম্য বৃদ্ধি এবং অত্যাবশ্যকীয় সরকারি পরিষেবাগুলির ক্ষয় নিয়ে উদ্বেগ এই প্রতিবাদের মূল কারণ ছিল।
প্যারিসে, রায়ট পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। নান্তেস এবং লিওঁ-এর মতো শহরগুলিতে রাস্তা অবরোধের ঘটনাও ঘটে। সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশজুড়ে প্রায় ৮০,০০০ পুলিশ কর্মকর্তা মোতায়েন করে। কর্তৃপক্ষ ট্র্যাফিক অবরোধ এবং অন্যান্য প্রতিবন্ধকতা অপসারণের নির্দেশ দেয় যাতে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন কার্যকলাপ স্বাভাবিক থাকে। এই ধর্মঘট ও প্রতিবাদের ব্যাপকতা সরকারের ব্যয় সংকোচন পরিকল্পনার বিরুদ্ধে জনগণের গভীর অসন্তোষকে তুলে ধরে।
এই ঘটনাগুলি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে ঘটে। প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে আস্থা ভোটে হেরে পদত্যাগ করেন, যার পরে প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু নিযুক্ত হন। সমালোচকরা লেকর্নুর নিয়োগকে পূর্ববর্তী সরকারি নীতির ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখেন, যা জন অসন্তোষকে আরও বাড়িয়ে তোলে এবং ব্যাপক বিক্ষোভের কারণ হয়। ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এর ঘটনাগুলি ফ্রান্সের অর্থনৈতিক নীতি এবং সরকারি পরিষেবার ভবিষ্যৎ নিয়ে গভীর সামাজিক উত্তেজনাকে স্পষ্ট করে তোলে। ধর্মঘট ও প্রতিবাদে ব্যাপক অংশগ্রহণ জাতির সামাজিক কাঠামোকে প্রভাবিত করা ব্যয় সংকোচন নীতিগুলির পুনর্বিবেচনা এবং নীতি পরিবর্তনের জন্য একটি সম্মিলিত দাবিকে নির্দেশ করে। CGT ইউনিয়নের প্রধান সোফি বিনের মতে, হাজার হাজার ধর্মঘট কর্মক্ষেত্রে সংঘটিত হয়েছে এবং স্কুলগুলি বেশিরভাগই বন্ধ ছিল। নতুন প্রধানমন্ত্রী সেবাস্তিয়ান লেকর্নু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই এই বিক্ষোভের সম্মুখীন হচ্ছেন। পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বায়রু বাজেট ঘাটতি মোকাবেলার জন্য প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর একটি ব্যয় সংকোচন পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিলেন, যা জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ সৃষ্টি করে।