ফিলিপাইন আনুষ্ঠানিকভাবে স্কারবার্ফ শোল-এ চীনের জাতীয় প্রকৃতি রিজার্ভ ঘোষণার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছে। দেশটি দাবি করেছে যে এই পদক্ষেপ আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে ফিলিপাইনের অধিকার লঙ্ঘন করছে। ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫-এ এই ঘটনাটি দক্ষিণ চীন সাগরের চলমান আঞ্চলিক বিরোধকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। ফিলিপাইনের পররাষ্ট্র দপ্তর (DFA) চীনের রাষ্ট্রীয় কাউন্সিলের এই ঘোষণার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে, "হুয়াংইয়ান দ্বীপ জাতীয় প্রকৃতি রিজার্ভ" প্রতিষ্ঠা আন্তর্জাতিক আইনি কাঠামোর লঙ্ঘন বলে উল্লেখ করেছে। DFA জোর দিয়ে বলেছে যে স্কারবার্ফ শোল, যা বাজো দে মাসিনলু নামেও পরিচিত, ফিলিপাইনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ যার উপর দেশটির সার্বভৌমত্ব ও এখতিয়ার রয়েছে। দপ্তরটি আরও দাবি করেছে যে ফিলিপাইনের নিজস্ব ভূখণ্ড এবং সামুদ্রিক অঞ্চলের মধ্যে পরিবেশগত সুরক্ষা এলাকা প্রতিষ্ঠার একচেটিয়া অধিকার রয়েছে।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের মাধ্যমে দেওয়া জবাবে, এই প্রতিবাদকে "ভিত্তিহীন অভিযোগ" বলে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে এবং এই অঞ্চলটিকে চীনের নিজস্ব ভূখণ্ডের অংশ বলে দাবি করা হয়েছে, রিজার্ভ প্রতিষ্ঠা চীনের সার্বভৌমত্বের আওতাধীন। চীনের এই ঘোষণা ফিলিপাইনের আঞ্চলিক দাবি প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টার একটি ধারাবাহিকতা হিসেবে দেখা হচ্ছে। ঐতিহাসিকভাবে, স্কারবার্ফ শোল উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। আগস্ট ২০২৫-এ, চীনের কোস্ট গার্ড জাহাজগুলি ফিলিপাইনের জাহাজগুলিকে এলাকা থেকে বের করে দিয়েছে বলে জানা গেছে। এর আগে, জুন ২০২৪-এ, একটি চীনা সামরিক হেলিকপ্টার শোল-এর উপর একটি ফিলিপাইনের মৎস্যবাহী বিমানের সাথে সংঘর্ষের কাছাকাছি একটি ঘটনায় জড়িত ছিল। এই ঘটনাগুলি এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী মনোভাবের একটি চিত্র তুলে ধরে।
ফিলিপাইন ধারাবাহিকভাবে তার সার্বভৌম অধিকার রক্ষা এবং আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখার পক্ষে কথা বলেছে, চীনকে আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের অবস্থান জানিয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ফিলিপাইনের প্রতি তার প্রতিরক্ষা প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে এবং দক্ষিণ চীন সাগরের কৌশলগত গুরুত্বের উপর জোর দিয়েছে। ওয়াশিংটন বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধানের আহ্বান জানিয়েছে এবং উত্তেজনা বাড়াতে পারে এমন পদক্ষেপের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এই প্রতিশ্রুতিটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিলিপাইনের মধ্যে ১৯৫১ সালের পারস্পরিক প্রতিরক্ষা চুক্তির উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা প্রশান্ত মহাসাগরে, দক্ষিণ চীন সাগর সহ, যেকোনো সশস্ত্র হামলার ক্ষেত্রে উভয় দেশকে পারস্পরিক প্রতিরক্ষা দিতে বাধ্য করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিলিপাইনের উচ্চ-পর্যায়ের কর্মকর্তাদের মধ্যে সাম্প্রতিক বৈঠকগুলিতে এই অঞ্চলে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেওয়া হয়েছে।
এই বিরোধের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল আইনি মাত্রা, যেখানে আন্তর্জাতিক রায়গুলি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ২০১৬ সালে, দ্য হেগের একটি সালিশি ট্রাইব্যুনাল দক্ষিণ চীন সাগরে চীনের বিস্তৃত দাবির বিরুদ্ধে রায় দিয়েছিল, যেখানে জাতিসংঘের সমুদ্র আইন কনভেনশন (UNCLOS) অনুসারে সেগুলির কোনও আইনি ভিত্তি নেই বলে উল্লেখ করা হয়েছিল। ট্রাইব্যুনাল রায় দিয়েছিল যে চীনের পদক্ষেপ, যার মধ্যে স্কারবার্ফ শোল-এ অবরোধও অন্তর্ভুক্ত, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে কারণ এটি চীন, ফিলিপাইন এবং ভিয়েতনামের মতো বেশ কয়েকটি দেশের জন্য একটি ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার ক্ষেত্র। এই রায় সত্ত্বেও, চীন এর বৈধতা স্বীকার করেনি এবং তার দাবিগুলি অব্যাহত রেখেছে। ফিলিপাইন তার প্রতিবাদে এই ২০১৬ সালের রায় এবং UNCLOS-এর উল্লেখ করে চীনের পদক্ষেপের অবৈধতার উপর জোর দিয়েছে।
স্কারবার্ফ শোল, যা ফিলিপাইনের জাম্বালস প্রদেশের উপকূল থেকে প্রায় ১২৪ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থিত, মাছ ধরার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকা এবং দক্ষিণ চীন সাগরের একটি কৌশলগত অবস্থান। সেখানে চীনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা এবং একটি প্রকৃতি রিজার্ভ স্থাপনকে অনেকেই তার আঞ্চলিক দাবিকে শক্তিশালী করার এবং সম্ভবত চূড়ান্ত দখলদারিত্বের দিকে নিয়ে যাওয়ার একটি কৌশলগত পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে, যা ফিলিপাইন দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে। এই পরিস্থিতি দক্ষিণ চীন সাগরে আন্তর্জাতিক আইন এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য চলমান চ্যালেঞ্জগুলিকে তুলে ধরে, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক সামুদ্রিক পথ।