ওপেক+ উৎপাদন বৃদ্ধি ও জ্বালানি বাজারের পরিবর্তন নিয়ে মার্স্ক সিইও-র উদ্বেগ

সম্পাদনা করেছেন: S Света

সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত এশিয়া প্যাসিফিক পেট্রোলিয়াম কনফারেন্স (APPEC) ২০২৫-এ মার্স্কের তেল ব্যবসার সিইও এমা মাজহারি বিশ্বব্যাপী তেলের বাজারের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, চাহিদা বৃদ্ধির হার মন্থর এবং ওপেক+ (OPEC+) দেশগুলোর উৎপাদন বৃদ্ধির সম্মিলিত প্রভাবে তেলের দাম কমে যাওয়ার একটি উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এই সম্মেলনটি জ্বালানি খাতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনার একটি প্রধান প্ল্যাটফর্ম, যেখানে বাণিজ্য, প্রযুক্তি এবং রূপান্তরের মতো বিষয়গুলি প্রাধান্য পায়।

মার্স্কের এই শীর্ষ কর্মকর্তা ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ তারিখে জানান যে, বিশ্বব্যাপী তেলের চাহিদা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও, ওপেক+ জোটের উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত বাজারের ভারসাম্যকে অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে এবং দামের উপর নিম্নমুখী চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তিনি বিশেষ করে ওপেক+ কর্তৃক অক্টোবর ২০২৫ থেকে দৈনিক ১৩৭,০০০ ব্যারেল তেল উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। এটি পূর্বের উৎপাদন কমানোর সিদ্ধান্তগুলো থেকে সরে আসার একটি কৌশল, যার উদ্দেশ্য বাজার শেয়ার পুনরুদ্ধার করা। এই পদক্ষেপটি বাজারের স্থিতিশীলতার উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।

শিল্প বিশ্লেষকদের মতে, ANZ-এর সিনিয়র কমোডিটি স্ট্র্যাটেজিস্ট ড্যানিয়েল হাইনেস উল্লেখ করেছেন যে, ওপেক+ এর এই উৎপাদন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পূর্বের কাটছাঁটগুলো থেকে একটি পরিবর্তন নির্দেশ করে, যা ২০২৬ সাল পর্যন্ত বহাল থাকার কথা ছিল। অন্যদিকে, এমিরেটস এনবিডি-র এডওয়ার্ড বেল মনে করেন যে, ওপেক+ বাজার পরীক্ষা করার জন্য উৎপাদন বাড়াতে পারে, যদিও বছরের শেষ নাগাদ এবং ২০২৬ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী মজুদের একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি প্রত্যাশিত। গোল্ডম্যান স্যাকসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমেরিকার উৎপাদন বৃদ্ধি সত্ত্বেও ২০২৬ সালে তেলের উদ্বৃত্ত সরবরাহ ১.৯ মিলিয়ন ব্যারেল প্রতিদিন হতে পারে, যা মূল্যের উপর আরও চাপ সৃষ্টি করবে।

এই প্রেক্ষাপটে, মাজহারি ২০৩০ সালের পর থেকে নিম্ন-কার্বন বাঙ্কার জ্বালানির সরবরাহে একটি উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পূর্বাভাস দিয়েছেন। এটি সামুদ্রিক এবং জ্বালানি খাতে আরও টেকসই বিকল্পের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। মার্স্ক এই পরিবর্তনের অগ্রভাগে রয়েছে, তারা কার্বন-নিরপেক্ষ মিথানল চালিত জাহাজে বিনিয়োগ করেছে, যা তাদের গ্রাহকদের জন্য পরিবেশবান্ধব পরিবহন পরিষেবা নিশ্চিত করবে। এই ধরনের উদ্যোগগুলি জ্বালানি বাজারের দীর্ঘমেয়াদী রূপান্তর এবং কার্বন নিঃসরণ হ্রাসের প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করে।

এছাড়াও, রাশিয়ার উপর সম্ভাব্য নতুন নিষেধাজ্ঞা নিয়ে উদ্বেগ তেলের সরবরাহকে আরও সীমিত করতে পারে, যা দামের উপর কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব ফেলতে পারে। তবে, সামগ্রিকভাবে, চাহিদা বৃদ্ধি এবং ওপেক+ এর উৎপাদন বৃদ্ধির সমন্বয় তেলের দামের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতি তৈরি করেছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, শিল্প নেতাদের জন্য বাজারের গতিপ্রকৃতি বোঝা এবং ভবিষ্যৎ রূপান্তরের জন্য প্রস্তুত থাকা অত্যন্ত জরুরি।

উৎসসমূহ

  • Reuters

  • Reuters

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।