ম্যানিলায় গণবিক্ষোভ: বন্যা নিয়ন্ত্রণ দুর্নীতি কেলেঙ্কারিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা জড়িত
সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович
ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় গত ১৬ নভেম্বর, ২০২৫ তারিখ থেকে তিন দিনব্যাপী বিশাল গণবিক্ষোভ শুরু হয়েছে। এই প্রতিবাদ কর্মসূচিতে হাজার হাজার নাগরিক অংশ নিচ্ছেন, যাদের মধ্যে প্রধানত ইগলেসিয়া নি ক্রিস্টো (Iglesia Ni Cristo) ধর্মীয় গোষ্ঠীর সদস্যরা রয়েছেন। এই ব্যাপক অসন্তোষের মূল কারণ হলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প সংক্রান্ত একটি বড় আকারের জালিয়াতি। অভিযোগ উঠেছে যে এই প্রকল্পগুলোর জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হলেও হয় সেগুলোর মান অত্যন্ত নিম্ন ছিল, অথবা সেগুলো একেবারেই বাস্তবায়িত হয়নি।
এই তহবিল অপব্যবহারের কেলেঙ্কারিটি এমন একটি দেশে জনগণের নিরাপত্তাকে সরাসরি হুমকির মুখে ফেলেছে, যেখানে নিয়মিতভাবে টাইফুন আঘাত হানে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুমান অনুসারে, ২০২৩ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এই খাতে দুর্নীতির কারণে দেশের অর্থনীতি প্রায় ১১৮.৫ বিলিয়ন পেসো (যা প্রায় ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য) হারিয়েছে। ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত নির্ধারিত এই প্রতিবাদ কর্মসূচিটি ঐতিহাসিক রিজাল পার্কে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর ফলে রাজধানীতে ব্যাপক লজিস্টিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রক্সাস বুলেভার্ড এবং বোনিফাসিও বুলেভার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ সড়কপথগুলো বন্ধ করে দেওয়া।
আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য ১৬,০০০-এরও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। যদিও এই বিক্ষোভকে ‘ধর্মীয়’ বলে দাবি করা হচ্ছে, তবে এটি মূলত গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর জন্য বরাদ্দকৃত তহবিলের অপব্যবহারের বিরুদ্ধে জনগণের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। অর্থ বিভাগ কিছু অসাধু প্রকল্পকে ‘ভূতুড়ে প্রকল্প’ (ghost projects) হিসেবে আখ্যা দিয়েছে, যা এই সমস্যার পদ্ধতিগত প্রকৃতি নির্দেশ করে।
এই অভিযোগের মাত্রা দেশের রাজনৈতিক কাঠামোকে নাড়িয়ে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই ৩৭ জন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাদের মধ্যে সিনেটর, কংগ্রেস সদস্য এবং ব্যবসায়ী রয়েছেন। এছাড়াও, ৮৬ জন নির্মাণ সংস্থার নির্বাহী এবং ৯ জন সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রায় ৯ বিলিয়ন পেসো কর ফাঁকির অভিযোগে মামলা করা হয়েছে।
এই কেলেঙ্কারির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন প্রেসিডেন্ট ফার্দিনান্দ মার্কোস জুনিয়রের চাচাতো ভাই এবং হাউস অফ রিপ্রেজেন্টেটিভসের প্রাক্তন স্পিকার মার্টিন রোমুয়ালদেজ, যিনি বিতর্কের মুখে পদত্যাগ করেছেন। প্রেসিডেন্ট মার্কোস জুনিয়র প্রকাশ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে বড়দিনের আগেই এই মামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তার করা হবে। তবে তিনি একই সাথে উল্লেখ করেছেন যে প্রমাণের অভাবে তার চাচাতো ভাইকে আপাতত বিচারের আওতায় আনা হবে না। অন্যদিকে, রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বেড়েছে উচ্চপদস্থ নেতৃত্বের প্রকাশ্য সমালোচনার কারণে। ভাইস প্রেসিডেন্ট সারা দুতের্তে প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট মার্কোসের জবাবদিহি দাবি করেছেন। তার অভিযোগ, মার্কোস ২০২৫ সালের জাতীয় বাজেটে স্বাক্ষর করেছিলেন, যা তার মতে, এই অসাধু প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন করেছিল। নেতৃত্বের এই প্রকাশ্য বিভেদ আস্থার গভীর সংকটের ইঙ্গিত বহন করছে।
এই রাজনৈতিক অস্থিরতার পটভূমিতে ফিলিপাইনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান জেনারেল রোমিও ব্রাউনার জুনিয়র একটি বিবৃতি দিয়েছেন। তিনি নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে সামরিক বাহিনী সংবিধান লঙ্ঘন করবে না এবং বৈধ নাগরিক মত প্রকাশের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবে না। এর মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও সাংবিধানিক শৃঙ্খলা বজায় রাখার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। উল্লেখ্য, সেপ্টেম্বরে এই বিষয়ে পূর্ববর্তী বিক্ষোভগুলিতে সহিংসতা দেখা গিয়েছিল, যার ফলে ১০০ জনেরও বেশি পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিলেন। তাই বর্তমান সমাবেশগুলোর শান্তিপূর্ণ প্রকৃতি নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উৎসসমূহ
Al Jazeera Online
Tens of thousands rally in Manila over corruption scandal that implicates top Philippine officials
Powerful politicians will be in jail by Christmas for corruption scandal, Philippine president says
Marcos vows jail time for suspects in Philippines graft scandal
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির তুরস্ক সফর: স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শান্তি আলোচনার উদ্যোগ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা যুদ্ধবিরতি ও স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাব পাস
ফ্রান্স ও ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর: রাফালে ও স্যাম্প/টি সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
