মানসিক স্বাস্থ্য উদ্বেগের মধ্যে ১৫ বছরের কম বয়সীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া নিষিদ্ধ করার ঘোষণা ডেনমার্কের
সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович
ডেনমার্ক সরকার একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের ঘোষণা করেছে: তারা ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার নিষিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে একটি বয়সসীমা আরোপ করতে চলেছে। পার্লামেন্টের অধিকাংশ দলের সমর্থনপুষ্ট এই আইনটি দেশের গভীর উদ্বেগকে প্রতিফলিত করে। তারা মনে করছে, ডিজিটাল ক্ষেত্র কীভাবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের মানসিক সুস্থতা গঠন করছে বা সম্ভবত ক্ষুণ্ণ করছে।
ডিজিটাল মন্ত্রী ক্যারোলিন স্টেগ ওলসেন (Karoline Stage Olsen) সরাসরি বলেছেন যে এই মাধ্যমগুলি “আমাদের শিশুদের সময়, শৈশব এবং সুস্থতা চুরি করছে,” যা স্পষ্ট বাহ্যিক কাঠামোর প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয়। সমাজের কাছে এটি ডিজিটাল অংশগ্রহণের সীমা নিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলে ধরেছে। এই আইন প্রণয়নের পটভূমিতে রয়েছে প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেনের (Mette Frederiksen) কঠোর মন্তব্য, যেখানে তিনি বলেছিলেন, “আমরা একটি দানবকে মুক্ত করে দিয়েছি।”
ডেনিশ প্রতিযোগিতা ও ভোক্তা সুরক্ষা কর্তৃপক্ষের (Danish Authority for Competition and Consumer Protection) বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ডেনিশ যুবকরা প্রতিদিন গড়ে দুই ঘণ্টা চল্লিশ মিনিট (২ ঘণ্টা ৪০ মিনিট) সামাজিক মাধ্যমে ব্যয় করে। এই বিশাল সময় ব্যয় করার পরিসংখ্যানই আইন প্রণয়নের পরিবর্তনের ভিত্তি হিসেবে কাজ করছে। সরকার বিশেষত স্ন্যাপচ্যাট (Snapchat), ইউটিউব (YouTube), ইনস্টাগ্রাম (Instagram) এবং টিকটক (TikTok)-এর মতো জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলির দিকে নজর দিচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে সামাজিক মাধ্যমের অত্যধিক ব্যবহার তরুণদের মধ্যে উদ্বেগ (anxiety) এবং বিষণ্নতা (depression) বৃদ্ধির সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই উদ্বেগজনক প্রবণতা রোধ করাই ডেনিশ সরকারের মূল লক্ষ্য। তবে, এই পরিকল্পনায় সুরক্ষা এবং পিতামাতার স্বায়ত্তশাসনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করে কিছু ব্যতিক্রম রাখা হয়েছে। যেমন, তেরো (১৩) এবং চৌদ্দ (১৪) বছর বয়সী শিশুদের ক্ষেত্রে পিতামাতা সম্মতি দিলে তারা সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে পারবে। ডেনমার্কে এই ব্যবস্থাগুলি ২০২৬ সালের প্রথম দিকে কার্যকর হতে পারে, যা বাহ্যিক উদ্দীপকের অবাধ অ্যাক্সেসের চেয়ে মানুষের অভ্যন্তরীণ সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার একটি শক্তিশালী বার্তা।
ডেনমার্কের এই উদ্যোগটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর বৈশ্বিক আন্দোলনের অংশ। যেখানে ডেনমার্ক সরাসরি নিয়ন্ত্রণের দিকে ঝুঁকছে, সেখানে অন্যান্য দেশ ভিন্ন পন্থা অবলম্বন করছে। উদাহরণস্বরূপ, অস্ট্রেলিয়া গত বছর ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য একই ধরনের নিষেধাজ্ঞা চালু করেছে, যা ডিসেম্বরে (December) কার্যকর হওয়ার কথা। অন্যদিকে, জার্মানিতে মাদকাসক্তি ও মাদক সংক্রান্ত ফেডারেল সরকারের কমিশনার হেনড্রিক স্ট্রিকের (Hendrik Streeck) মতে, সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞার পরিবর্তে মিডিয়া শিক্ষার ওপর জোর দেওয়াকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট প্রমাণ করে যে শিশুদের ডিজিটাল নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন সরকার বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছে।
উৎসসমূহ
Deutsche Welle
Reuters
AP News
Cadena SER
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির তুরস্ক সফর: স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শান্তি আলোচনার উদ্যোগ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা যুদ্ধবিরতি ও স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাব পাস
ফ্রান্স ও ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর: রাফালে ও স্যাম্প/টি সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
