কিউবা বর্তমানে এক গভীর বিদ্যুৎ সংকটের মুখোমুখি, যার ফলে দেশজুড়ে ভয়াবহ ও দৈনিক বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটছে। এই পরিস্থিতি দ্বীপরাষ্ট্রের জনজীবন, বাণিজ্য, শিক্ষা এবং খেলাধুলার কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। ২০২৫ সালে জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা (SEN) একাধিকবার ভেঙে পড়েছে, যা দেশের বিদ্যুৎ সরবরাহের ভঙ্গুরতা তুলে ধরেছে। ২০২৫ সালের ১০ই সেপ্টেম্বর সকাল ৯:১৪ মিনিটে জাতীয় বিদ্যুৎ ব্যবস্থা (SEN) ভেঙে পড়ার ঘটনাটি ছিল এই সংকটের একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ, যার ফলে পুরো দ্বীপ বিদ্যুৎবিহীন হয়ে পড়ে। এটি ছিল ২০২৫ সালে দ্বিতীয় এবং গত বছরের শেষ থেকে পঞ্চম দেশব্যাপী বিদ্যুৎ বিভ্রাট।
এই সংকটটি দৈনিক ও ব্যাপক বিদ্যুৎ বিভ্রাটের দ্বারা চিহ্নিত, যা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রায় ২০ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হচ্ছে, যেখানে রাজধানী হাভানার মতো শহরগুলিতে ৪-৫ ঘন্টার বিভ্রাট দেখা যাচ্ছে। এর ফলে খেলাধুলা, শ্রম এবং শিক্ষা কার্যক্রম স্থগিত করতে হয়েছে। এই বিদ্যুৎ সংকটের মূল কারণগুলির মধ্যে রয়েছে পুরনো থার্মোইলেকট্রিক পাওয়ার প্ল্যান্টগুলির অকার্যকারিতা এবং জ্বালানির অভাব, যা বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতির কারণে আমদানি ব্যাহত করছে। কিউবার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা মূলত পুরনো, সোভিয়েত-যুগের প্রযুক্তির উপর নির্ভরশীল, যার রক্ষণাবেক্ষণ এবং আধুনিকীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। অনেক পাওয়ার প্ল্যান্ট ৪০ বছরেরও বেশি পুরনো।
এই পরিকাঠামোগত দুর্বলতা, জ্বালানি আমদানির উপর অত্যধিক নির্ভরতা (বিশেষ করে ভেনিজুয়েলা, রাশিয়া এবং মেক্সিকো থেকে) এবং বৈদেশিক মুদ্রার অভাব পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলেছে। ব্যক্তিগত ব্যবসাগুলি জেনারেটরের উপর নির্ভর করে পরিচালনা করতে হিমশিম খাচ্ছে, কারণ অনানুষ্ঠানিক বাজারে জ্বালানি দুষ্প্রাপ্য এবং অত্যন্ত ব্যয়বহুল। পর্যটন হোটেলগুলিতে নিজস্ব বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা থাকলেও, বাইরের পরিষেবাগুলি বন্ধ থাকায় অতিথিরা তাদের হোটেলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছেন।
এই সংকট কেবল বিদ্যুৎ সরবরাহকেই প্রভাবিত করছে না, বরং কিউবার অর্থনীতিকেও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে, যা দেশের অর্থনৈতিক মন্দাকে আরও বাড়িয়ে তুলছে। এই পরিস্থিতি বিরল সরকারি-বিরোধী বিক্ষোভের জন্ম দিয়েছে এবং নাগরিকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। অনেক নাগরিকের মতে, এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে হলে সরকারের অর্থনৈতিক নীতি এবং বিদ্যুৎ খাতের আমূল পরিবর্তন প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক শক্তি সংস্থা (IEA) সতর্ক করেছে যে, আধুনিকীকরণ ছাড়া এই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা মৌলিক চাহিদা মেটাতে পারবে না, প্রবৃদ্ধি তো দূরের কথা। কিউবার বিদ্যুৎ ব্যবস্থার মেরামতের জন্য প্রায় ৮ থেকে ১০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের প্রয়োজন বলে অনুমান করা হয়েছে। এই বিশাল অঙ্কের বিনিয়োগের অভাব এবং বৈদেশিক মুদ্রার সংকট কিউবার বিদ্যুৎ খাতকে এক অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।