কাতার মধ্যস্থতায় দোহায় ডিআরসি এবং এম২৩-এর মধ্যে কাঠামোবদ্ধ শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

দীর্ঘদিনের সশস্ত্র সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে 2025 সালের 15 নভেম্বর কাতারের দোহায় গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র কঙ্গো (ডিআরসি)-এর প্রতিনিধিরা এবং রুয়ান্ডা-সমর্থিত বিদ্রোহী গোষ্ঠী ‘মার্চ 23 আন্দোলন’ (এম২৩)-এর মধ্যে একটি কাঠামোবদ্ধ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। পূর্ব কঙ্গোর এই দীর্ঘস্থায়ী সংঘাত শত শত হাজার বেসামরিক নাগরিকের স্থানচ্যুতি ঘটিয়েছে এবং অসংখ্য প্রাণহানি ঘটিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, গত এপ্রিল মাসে মাত্র দুই দিনের মধ্যে 50 জনেরও বেশি লোক নিহত হয়েছিল।

এই কূটনৈতিক প্রক্রিয়ার মূল মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে কাতার, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও লাভ করেছে। এটি গ্রেট লেকস অঞ্চলের সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততার গভীরতা নির্দেশ করে। কাঠামোবদ্ধ এই দলিলে আটটি প্রোটোকল অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা পুনরুদ্ধার, অর্থনৈতিক সংস্কার এবং সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর সমাজে পুনঃএকত্রীকরণ। তবে, স্বাক্ষরের সময় কেবল দুটি প্রোটোকল অনুমোদিত হয়েছে: যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণ এবং বন্দী বিনিময় সংক্রান্ত প্রোটোকল। অবশিষ্ট ছয়টি প্রোটোকলের জন্য আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।

এই শান্তি আলোচনা প্রক্রিয়াটি বহু-পর্যায়ের। এর আগে, 2025 সালের জুলাই মাসে দোহায় ‘নীতিমালার ঘোষণা’ স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেখানে পক্ষগুলো স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েছিল। এরপর, 2025 সালের অক্টোবর মাসে, কাতারের মধ্যস্থতাতেই এই যুদ্ধবিরতি পর্যবেক্ষণের জন্য একটি নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া গঠনের বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। কাতারের রাষ্ট্রীয় মন্ত্রী মোহাম্মদ বিন আব্দুল-আজিজ আল-খুলাইফি এই চুক্তি স্বাক্ষরকে সংলাপের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের দিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। অন্যদিকে, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সিনিয়র উপদেষ্টা এবং বিশেষ দূত মাসাদ বুলোস এই ঘটনাটিকে চূড়ান্ত শান্তি চুক্তির জন্য একটি ‘উত্থান মঞ্চ’ বা ‘স্টার্টিং প্ল্যাটফর্ম’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

কূটনৈতিক ঘোষণার পরেও, মাঠ পর্যায়ে বাস্তব পরিস্থিতির সঙ্গে এর যথেষ্ট ফারাক রয়ে গেছে। চুক্তি স্বাক্ষরের দিন সকালেও যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, যেখানে এম২৩ সরকারি বাহিনীর বোমাবর্ষণের অভিযোগ করেছে এবং একই সাথে তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডের বিস্তৃতি ঘটিয়েছে বলেও দাবি করেছে। শান্তি পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের কথা রয়েছে, যা চুক্তির বাস্তবায়ন এবং জাতীয় পুনর্মিলনের বিষয়ে সুপারিশ তৈরি করবে, যার মধ্যে ক্ষতিপূরণের বিষয়টিও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

এই সম্পূর্ণ উদ্যোগের সাফল্য নির্ভর করছে অবশিষ্ট ছয়টি প্রোটোকলের বিষয়ে পক্ষগুলোর ঐকমত্যে পৌঁছানোর ক্ষমতার ওপর। এই প্রোটোকলগুলো সংঘাতের কাঠামোগত সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করে, যেখানে এম২৩ টুৎসি সংখ্যালঘুদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্ব করে এবং ডিআরসি সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। 2025 সালের শুরুর দিকে এম২৩-এর আক্রমণ, যার মধ্যে জানুয়ারিতে গোমা এবং ফেব্রুয়ারিতে বুকাবু দখল অন্তর্ভুক্ত ছিল, সেই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট দেখায় যে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা প্রায়শই নতুন করে সহিংসতার পথ খুলে দেয়। গোমা থেকে আল জাজিরার রিপোর্টার আলাইন ওয়াকিয়ানি-এর মতো পর্যবেক্ষকরা উল্লেখ করেছেন যে, যদিও জনগণের মধ্যে আশা রয়েছে, তবে তাৎক্ষণিক দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন এখনো মাঠ পর্যায়ে আসেনি। জাতিসংঘ সকল পক্ষকে টেকসই সমাধানের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে আন্তর্জাতিক মানবিক আইন এবং মানবাধিকার কঠোরভাবে মেনে চলার আহ্বান অব্যাহত রেখেছে।

উৎসসমূহ

  • Al Jazeera Online

  • DR Congo, M23 rebels sign framework deal for peace after talks in Qatar

  • Congo, M23 sign framework for peace in Qatar, more steps needed

  • Congo and Rwanda-backed M23 rebels sign framework for peace deal, but tensions remain

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।