জার্মানির শ্রমবাজারে আগস্ট ২০২৫ সালে বেকার মানুষের সংখ্যা তিন মিলিয়ন অতিক্রম করেছে, যা গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সি (BA) এর তথ্য অনুযায়ী, এই মাসে ৪৬,০০০ নতুন মানুষ বেকার হয়েছেন, ফলে মোট বেকারের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩,০২৫,০০০ জনে। এতে বেকারত্বের হার ০.১ শতাংশ বেড়ে ৬.৪ শতাংশে পৌঁছেছে।
ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির প্রধান আন্দ্রেয়া নাহলেস এই পরিস্থিতিকে 'গ্রীষ্মকালীন মন্দা' হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন, যেখানে কোম্পানিগুলো ছুটির পর নতুন নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, বিগত কয়েক বছরের অর্থনৈতিক দুর্বলতা শ্রমবাজারকে প্রভাবিত করছে, তবে স্থিতিশীলতার কিছু প্রাথমিক লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। যদিও মৌসুমী সমন্বয় অনুযায়ী জুলাই মাসের তুলনায় অক্টোবরে বেকারত্ব কিছুটা কমেছে, তবে গত বছরের আগস্ট মাসের তুলনায় এই সংখ্যা ১৫৩,০০০ বেশি।
দেশের অর্থনীতি বর্তমানে এক ধরনের স্থবিরতার সম্মুখীন। চলতি বছরের বসন্তকালে জিডিপি ০.৩% হ্রাস পেয়েছে, যা পূর্ববর্তী দুই বছরের মন্দার পর একটি উদ্বেগজনক চিত্র। শিল্প খাত উচ্চ জ্বালানি খরচ এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতির কারণে বিশেষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, যা রপ্তানিকেও প্রভাবিত করছে। এই পরিস্থিতিতে, জার্মান সরকার কর্পোরেট কর হার কমানো, অবকাঠামো পুনরুজ্জীবিত করা এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস করার মতো বিভিন্ন সংস্কারমূলক পদক্ষেপের পরিকল্পনা করছে। তবে, দক্ষ শ্রমিকের অভাব এবং দীর্ঘমেয়াদী অনুমতি প্রক্রিয়ার মতো কাঠামোগত সমস্যাগুলো এখনও বিদ্যমান।
ফেডারেল এমপ্লয়মেন্ট এজেন্সির প্রধান আন্দ্রেয়া নাহলেস এবং শ্রমমন্ত্রী বারবেল বাস পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য সরকারের বিনিয়োগ ও সংস্কার পরিকল্পনার উপর জোর দিয়েছেন। অন্যদিকে, জার্মান এমপ্লয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান রাইনার ডুলাগারের মতে, তিন মিলিয়ন বেকার হওয়া একটি 'লজ্জাজনক' বিষয় এবং তিনি 'প্রকৃত শরৎকালীন সংস্কারের' আহ্বান জানিয়েছেন। চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মেৎজও স্বীকার করেছেন যে এই পরিস্থিতি আশ্চর্যজনক নয় এবং সরকারের প্রধান লক্ষ্য হলো অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য বড় ধরনের বিনিয়োগ পরিকল্পনা।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক নীতি জার্মানির রপ্তানির উপর প্রভাব ফেলছে। যদিও একটি বাণিজ্য যুদ্ধ এড়ানোর জন্য একটি চুক্তি হয়েছে, তবে এর বাস্তবায়নের অনিশ্চয়তা জার্মান রপ্তানিকারকদের প্রভাবিত করছে। এই অর্থনৈতিক মন্দা ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশ এবং বিশ্ব বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে। এই পরিস্থিতিতে, জার্মানির অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার জন্য সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপগুলো কতটা কার্যকর হবে, তা সময়ই বলে দেবে।