জাপানের মহাকাশ কর্মসূচিতে নতুন দিগন্ত: এইচ৩ রকেটে সফলভাবে উৎক্ষেপিত হলো এইচটিভি-এক্স১ কার্গো যান
সম্পাদনা করেছেন: Svetlana Velgush
২০২৫ সালের ২৬ অক্টোবর জাপানের মহাকাশ কর্মসূচির ইতিহাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হলো। জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA) তাদের নতুন প্রধান বাহক এইচ৩ রকেটের সফল উৎক্ষেপণ সম্পন্ন করেছে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত তানেগাশিমা স্পেস সেন্টার থেকে জাপানের স্থানীয় সময় সকাল ৯:০০ টায় (JST) এই উৎক্ষেপণটি শুরু হয়। এই রকেটে বহন করা হচ্ছিল এইচটিভি-এক্স১ নামের একটি কার্গো মহাকাশযান, যা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন (ISS)-এর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছে।
উন্নত এইচটিভি-এক্স সিরিজের কার্গো যানের জন্য এই উড়ানটি ছিল প্রথম। এইচটিভি-এক্স১ এই সিরিজের পথপ্রদর্শক হিসেবে কাজ করছে। এটি পূর্ববর্তী এইচটিভি (কোনোতোরি) যানের স্থলাভিষিক্ত হলো, যা ২০০৯ সাল থেকে ২০২০ সালের মধ্যে আইএসএস-এ নয়টি মিশন সফলভাবে সম্পন্ন করেছিল। কক্ষপথে সফলভাবে স্থাপন নিশ্চিত করে জাপানের নতুন প্রজন্মের পরিবহন ব্যবস্থার প্রস্তুতি এবং আন্তর্জাতিক মহাকাশ লজিস্টিকস ক্ষেত্রে জাপানের অবস্থান আরও সুদৃঢ় হলো।
এইচটিভি-এক্স১ মহাকাশ লজিস্টিকসের সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করেছে। এর পেলোড বহন ক্ষমতা ৫.৮৫ টন পর্যন্ত পৌঁছেছে, যা পূর্বসূরির তুলনায় প্রায় ৪৫% বেশি। এছাড়াও, এর আয়তন ৭৮ কিউবিক মিটার, যা ৬০% বেশি। একটি গুরুত্বপূর্ণ নতুন সংযোজন হলো উড়ানের সময় কার্গো যানের বিদ্যুৎ সরবরাহ করার ক্ষমতা। নিম্ন-তাপমাত্রার সংরক্ষণের প্রয়োজন এমন সংবেদনশীল বৈজ্ঞানিক নমুনা পরিবহনের জন্য এই বৈশিষ্ট্যটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
আইএসএস-এ অবস্থানরত JAXA-এর নভোচারী কিমিয়া ইউই আগামী বৃহস্পতিবার, ২০২৫ সালের ৩০ অক্টোবর, ক্যানাডার্ম২ রোবোটিক হাত ব্যবহার করে এইচটিভি-এক্স১-কে গ্রহণ করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। সরবরাহ পৌঁছে দেওয়া এবং বর্জ্য সংগ্রহ করার জন্য মহাকাশযানটি ছয় মাস পর্যন্ত সংযুক্ত অবস্থায় থাকবে। এই মিশনের কৌশলগত বিশেষত্ব হলো, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হওয়ার পরেও এইচটিভি-এক্স১ ১৮ মাস পর্যন্ত স্বায়ত্তশাসিতভাবে প্রযুক্তিগত প্রদর্শনী মিশন সম্পাদন করতে সক্ষম। এর মধ্যে উচ্চতর কক্ষপথ থেকে ছোট উপগ্রহ (কিউবস্যাট) উৎক্ষেপণের সম্ভাবনাও রয়েছে, যা ভবিষ্যতের দূর মহাকাশ লজিস্টিকসের জন্য নতুন পথ খুলে দেবে।
JAXA এবং মিতসুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ (MHI) যৌথভাবে এইচ৩ বাহকটি তৈরি করেছে, যার লক্ষ্য হলো এইচ-আইআইএ-এর তুলনায় উৎক্ষেপণ খরচ প্রায় অর্ধেক কমিয়ে আনা। এর একটি কারণ হলো এলই-৯ ইঞ্জিন ব্যবহার। যদিও ২০২৩ সালের মার্চ মাসে এটির প্রথম উৎক্ষেপণ ব্যর্থ হয়েছিল, তবুও রকেটটি পরবর্তী উড়ানগুলিতে নির্ভরযোগ্যতা প্রদর্শন করেছে, যার মধ্যে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে সফল পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ অন্তর্ভুক্ত। এইচ৩-৩০০এস কনফিগারেশনের একটি উৎক্ষেপণের আনুমানিক খরচ প্রায় ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এইচ৩ রকেটের জন্য এই সফল উৎক্ষেপণটি ছিল সপ্তম, যা জাপানের একটি নমনীয় এবং প্রতিযোগিতামূলক পরিবহন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়টি নিশ্চিত করে।
উৎসসমূহ
Daily Mail Online
NASASpaceFlight.com
Space Voyaging
SpacePolicyOnline.com
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
