গাজায় যুদ্ধবিরতির কারণে লোহিত সাগরে হুতিদের হামলা স্থগিত, সুয়েজ খালের আয়ে প্রভাব

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা সম্প্রতি লোহিত সাগরে ইসরায়েলি লক্ষ্যবস্তু এবং জাহাজগুলোর ওপর হামলা সাময়িকভাবে বন্ধ রাখার যে ঘোষণা দিয়েছে, তা বিশ্ব বাণিজ্যের পথগুলোর জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে। একটি অনানুষ্ঠানিক চিঠির মাধ্যমে জানা যায়, এই সিদ্ধান্তটি গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতি বজায় থাকার শর্তের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। হুথিরা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে, যদি ইসরায়েল সামরিক কার্যক্রম পুনরায় শুরু করে, তবে তারা অবিলম্বে তাদের অপারেশন আবার শুরু করতে প্রস্তুত, যার মধ্যে লোহিত সাগর এবং আরব সাগর দিয়ে জাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করাও অন্তর্ভুক্ত। ২০২৩ সালের শেষের দিকে ইসরায়েল বা তার মিত্রদের সাথে সম্পর্কিত জাহাজগুলোতে নিয়মিত হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে এই কৌশলগত পদক্ষেপটি সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আঞ্চলিক রাজনৈতিক গতিশীলতার সরাসরি নির্ভরতা প্রমাণ করে।

এই ঘটনার শুরু থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, কমপক্ষে নয়জন নাবিক নিহত হয়েছেন এবং চারটি জাহাজ ডুবে গেছে। তবে, এই শর্তসাপেক্ষ শান্ত অবস্থার সমান্তরালে অর্থনৈতিক প্রবাহের পুনরুদ্ধার লক্ষ্য করা যাচ্ছে। সুয়েজ খাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, ২০২৫ সালের জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত সময়কালে তাদের আয় বার্ষিক ভিত্তিতে ১৪.২% বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০২৪ সালের একই সময়ের তুলনায় উল্লেখযোগ্য। এই চার মাসে মোট ৪,৪০৫টি জাহাজ খালটি অতিক্রম করেছে এবং ১৮৫ মিলিয়ন মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করেছে। ২০২৪ সালে এই সংখ্যা ছিল ৪,৩৩২টি জাহাজ এবং ১৬৭.৬ মিলিয়ন টন।

অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, হুথি হামলার কারণে সৃষ্ট বাধাগুলো করোনাভাইরাস মহামারির চেয়েও নৌ-চলাচলের ওপর বেশি প্রভাব ফেলেছিল। ২০২৪ সালে বিশ্ব বাণিজ্যের ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অনুমান করা হয়েছিল। বর্তমানে সামুদ্রিক পথগুলো যখন তাদের পূর্বের সক্ষমতা ফিরে পাচ্ছে, তখন এই স্থিতিশীলতা মিশরের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুয়েজ খাল মিশরের বৈদেশিক মুদ্রার একটি প্রধান উৎস, যা ২০২৩ সালে প্রায় ১০.২ বিলিয়ন ডলার আয় এনেছিল। সুতরাং, শত শত কিলোমিটার দূরে নেওয়া রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ওপর এই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা সরাসরি নির্ভরশীল।

এদিকে, ইয়েমেনের অভ্যন্তরে একটি ভিন্ন কূটনৈতিক সংকট চলছে। ২০২৫ সালের অক্টোবরের শেষের দিকে হুথিরা জাতিসংঘে কর্মরত কয়েক ডজন কর্মীকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে আটক করেছে। জাতিসংঘ দৃঢ়ভাবে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে এবং তাদের কর্মীদের—যাদের মধ্যে ইয়েমেনি এবং বিদেশী বিশেষজ্ঞ উভয়ই রয়েছেন—অবিলম্বে এবং নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করেছে। এর আগে, অক্টোবরের মাঝামাঝি সময়ে, হুথিরা সানায় জাতিসংঘের বিশজন কর্মীকে আটক করে এবং তাদের যোগাযোগ সরঞ্জাম জব্দ করে, যা সংস্থাটির কার্যক্রমকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করে। জাতিসংঘ এই ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মানবিক সহায়তা প্রদানে বাধা হিসেবে বিবেচনা করে।

এই সামগ্রিক পরিস্থিতি একটি জটিল গ্রন্থি তৈরি করেছে। একদিকে সুয়েজ খালের মাধ্যমে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চলছে, অন্যদিকে ইয়েমেনের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক কাঠামোর মানবিক মিশনগুলো নিজস্ব চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে। আঞ্চলিক ঘটনাবলীর এই জটিল চিত্রে আরও একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে হুথি সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অফ জেনারেল স্টাফের মৃত্যুর খবর। জানা গেছে, অক্টোবরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় আহত হওয়ার পর তিনি মারা যান। এই ঘটনাগুলো প্রমাণ করে যে মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ও অর্থনীতি কতটা আন্তঃসংযুক্ত এবং ভঙ্গুর।

উৎসসমূহ

  • Al Jazeera Online

  • Al Jazeera

  • Israel Hayom

  • The Washington Post

  • Reuters

  • AP News

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।