বিশ্বব্যাপী পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের পুনর্গঠন: অতিরিক্ত ক্ষমতা এবং মার্কিন শুল্কের প্রভাব

সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович

বিশ্বব্যাপী পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প বর্তমানে এক বড় ধরনের পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত উৎপাদন ক্ষমতা, কম মুনাফা এবং প্রধান উৎপাদকদের লোকসানের সম্মুখীন হওয়ার মতো চ্যালেঞ্জগুলি এই শিল্পের সংকটকে আরও তীব্র করে তুলেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য শুল্ক এবং ইউরোপের উচ্চ জ্বালানি খরচ এই পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে, যার ফলে উৎপাদন হ্রাস, কারখানা বন্ধ এবং দক্ষিণ কোরিয়া, ইউরোপ ও চীনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলগুলিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে।

এই শিল্পের সংকট মূলত চাহিদার বৃদ্ধিকে ছাড়িয়ে যাওয়া দ্রুত বর্ধিত ক্ষমতার ফল। এর ফলে, এলজি কেম (LG Chem) এবং ডাও ইনকর্পোরেটেড (Dow Inc.)-এর মতো প্রধান কোম্পানিগুলি লোকসানের সম্মুখীন হচ্ছে। এপ্রিল ২০২৫-এ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ কোরিয়ার পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের উপর ২৫% শুল্ক আরোপ করে, যা পরবর্তীতে একটি বাণিজ্য চুক্তির পর ১৫%-এ হ্রাস করা হয়। এই শুল্কের প্রতিক্রিয়ায়, দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার কোম্পানিগুলিকে তাদের ন্যাপথা-ক্র্যাকিং ক্ষমতা কমাতে উৎসাহিত করছে। দেশটিতে বার্ষিক ন্যাপথা-ক্র্যাকিং ক্ষমতা ১৪.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন, এবং সরকার ২.৭ থেকে ৩.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন ক্ষমতা হ্রাসের জন্য চাপ দিচ্ছে, যা মোট ক্ষমতার প্রায় এক-চতুর্থাংশ। এই পদক্ষেপগুলি শিল্পের কার্যকারিতা বৃদ্ধি এবং মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যে নেওয়া হচ্ছে।

ইউরোপে, ২০২২ সালের জ্বালানি সংকটের পর থেকে উচ্চ জ্বালানি খরচের কারণে কারখানা বন্ধের ঘটনা ঘটছে। ডাও ইনকর্পোরেটেড জার্মানি এবং যুক্তরাজ্যে তাদের তিনটি উৎপাদন কেন্দ্র বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে, যা জুলাই ২০২৫-এর মধ্যে কার্যকর হবে। এই বন্ধের ফলে প্রায় ৮০০ কর্মী ছাঁটাই হবেন। এই পদক্ষেপগুলি ইউরোপীয় বাজারের ক্ষমতাকে সঠিক মাত্রায় আনতে, উচ্চ-ব্যয়বহুল এবং শক্তি-নিবিড় সম্পদগুলি অপসারণ করতে এবং ডাও-এর লাভজনকতা উন্নত করতে সহায়ক হবে। জার্মানির বোহলেনে অবস্থিত ইথিলিন ক্র্যাকার এবং শ্কোপাউ-এর ক্লোর-অ্যালকালি ও ভিনাইল সম্পদগুলি ২০২৭ সালের চতুর্থ ত্রৈমাসিকে বন্ধ হয়ে যাবে, এবং যুক্তরাজ্যের ব্যারি-তে অবস্থিত বেসিক সিলোক্সেন প্ল্যান্টটি ২০২৬ সালের মাঝামাঝি সময়ে বন্ধ হবে।

চীনও তাদের পেট্রোকেমিক্যাল খাতের একটি বড় ধরনের সংস্কারের কথা ভাবছে, যার মধ্যে পুরনো এবং লোকসানি কারখানা বন্ধ করা অন্তর্ভুক্ত। এই পদক্ষেপগুলি ধ্বংসাত্মক প্রতিযোগিতা কমাতে এবং শিল্পের সামগ্রিক মান উন্নত করতে সহায়ক হবে। এই সংস্কারের অংশ হিসেবে, ২০ বছরের বেশি পুরনো উৎপাদন ইউনিটগুলিকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে এবং পরিবেশগত কর্মক্ষমতা, শক্তি দক্ষতা এবং সুরক্ষার উপর জোর দেওয়া হবে। এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি কেবল উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাসই নয়, বরং শিল্পের দীর্ঘমেয়াদী স্থায়িত্ব এবং প্রতিযোগিতামূলকতা বাড়ানোর একটি প্রয়াস। যদিও এই পরিবর্তনগুলি স্বল্প মেয়াদে কিছু চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে, তবে এটি শিল্পকে একটি আরও স্থিতিশীল এবং লাভজনক ভবিষ্যতের দিকে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রাখে।

দক্ষিণ কোরিয়ার দশটি বৃহত্তম পেট্রোকেমিক্যাল কোম্পানি তাদের ন্যাপথা-ক্র্যাকিং ক্ষমতা বার্ষিক ২.৭ থেকে ৩.৭ মিলিয়ন মেট্রিক টন হ্রাস করতে সম্মত হয়েছে। এই পদক্ষেপটি দেশের মোট ক্ষমতার প্রায় ২৫%। এলজি কেম (LG Chem) এবং লোট্টে কেমিক্যাল (Lotte Chemical)-এর মতো প্রধান সংস্থাগুলি এই অতিরিক্ত সরবরাহ এবং লাভজনকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য বিশেষ রাসায়নিক এবং ব্যাটারি উপকরণের দিকে মনোনিবেশ করছে। ইউরোপীয় রাসায়নিক শিল্প উচ্চ জ্বালানি খরচের কারণে উল্লেখযোগ্য প্রতিকূলতার সম্মুখীন হচ্ছে, যেখানে ২০২৫ সালের প্রথম ত্রৈমাসিকে ইউরোপে প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় ৩.৩ গুণ বেশি ছিল। এর ফলে, ক্র্যাকার ব্যবহারের হার ৭৪%-এ নেমে এসেছে, যা দীর্ঘমেয়াদী গড় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গড়ের তুলনায় অনেক কম। সাবিক (Sabic) যুক্তরাজ্যে তাদের ক্র্যাকার বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে এবং লায়ন্ডেলবাসেল (LyondellBasell) নেদারল্যান্ডসে তাদের একটি ইউনিট বন্ধ করছে। চীনও তাদের পেট্রোকেমিক্যাল খাতের সংস্কার করছে, যেখানে ২০ বছরের বেশি পুরনো উৎপাদন ইউনিটগুলিকে পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা হবে এবং পরিবেশগত কর্মক্ষমতা, শক্তি দক্ষতা ও সুরক্ষার উপর জোর দেওয়া হবে।

উৎসসমূহ

  • Reuters

  • Reuters

  • Reuters

  • Reuters

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।