২০২৫ সালের ২৯ অক্টোবর সাধারণ নির্বাচনের পর তানজানিয়ায় ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু
সম্পাদনা করেছেন: Татьяна Гуринович
২০২৫ সালের ২৯ অক্টোবর তানজানিয়ায় অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরপরই দেশজুড়ে ব্যাপক গণবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। ক্ষমতাসীন দল ‘চামা চা মাপিন্দুজী’ (CCM)-এর প্রার্থী এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট সামিয়া সুলুহু হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। স্বাধীন জাতীয় নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, তিনি প্রায় ৯৮% ভোট পেয়েছেন। এই বিশাল ব্যবধানে জয়লাভের ঘোষণাটিই ছিল অসন্তোষের মূল কারণ, যা দ্রুত দার-এস-সালামসহ প্রধান শহরগুলোতে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়।
এই বিক্ষোভের জন্ম হয়েছিল নির্বাচনের আগে থেকেই। মূল বিরোধী দলীয় নেতাদের প্রতিযোগিতা থেকে বাদ দেওয়া এবং ভোটারদের ইচ্ছাকে দমন করার অভিযোগ এই অসন্তোষকে আরও বাড়িয়ে তোলে। বিশেষত, প্রধান বিরোধী দল ‘চাদেমা’ (গণতন্ত্র ও প্রগতির জন্য দল) আচরণবিধি স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখা হয়েছিল। যদিও ভোটার উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো—আগের নির্বাচনের ৫০% থেকে বেড়ে এবার ৮৭% হয়েছে—তবে প্রকৃত প্রতিদ্বন্দ্বিতার অভাবই সাধারণ মানুষের মধ্যে গভীর অবিশ্বাস সৃষ্টি করে।
শুরু হওয়া এই বিক্ষোভ দমনে কর্তৃপক্ষের প্রতিক্রিয়া ছিল অত্যন্ত কঠোর। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে দার-এস-সালামে কারফিউ জারি করা হয় এবং সামরিক ইউনিট মোতায়েন করা হয় বলে জানা গেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকাণ্ডের ফলে কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন। তবে বিরোধী দল ‘চাদেমা’ হতাহতের সংখ্যা আরও অনেক বেশি বলে দাবি করেছে। তাদের তথ্যমতে, তিন দিনের সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে প্রায় ৭০০ জন নিহত হয়েছেন।
আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট এই নির্বাচনকে “মুক্ত বা ন্যায্য কোনোটাই নয়” বলে অভিহিত করেছে। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ মানবাধিকার সংস্থাগুলো নাগরিকদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অস্ত্র ব্যবহারের ঘটনাগুলোর অবিলম্বে ও নিরপেক্ষ তদন্তের জোর দাবি জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য, কানাডা এবং নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা যৌথভাবে সর্বোচ্চ সংযম বজায় রাখা এবং মত প্রকাশের অধিকারকে সম্মান জানানোর আহ্বান জানিয়েছেন।
এই সমস্ত ঘটনার প্রেক্ষাপটে, সারা দেশে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ায় তথ্যের স্বাধীন যাচাই-বাছাই কঠিন হয়ে পড়েছিল। এর ফলে স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, কর্তৃপক্ষের কাছে যেকোনো ধরনের ভিন্নমত বা প্রতিবাদ প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থার প্রতি সরাসরি চ্যালেঞ্জ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির এই সীমাবদ্ধতা এবং কঠোর পদক্ষেপগুলো গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আস্থা আরও কমিয়ে দিয়েছে, যা তানজানিয়ার রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য একটি বড় প্রশ্নচিহ্ন তৈরি করেছে।
উৎসসমূহ
The New York Times
Reuters: Tanzania's Hassan declared landslide winner in election marred by violence
AP News: Tanzania President Hassan wins disputed election with more than 97% of vote, official results show
Reuters: UN rights office alarmed by killings in Tanzania protests
AP News: Tanzania deploys the military and imposes a curfew on election day after protests erupt
Amnesty International: Tanzania: Authorities must investigate police use of force against election day protesters
এই বিষয়ে আরও খবর পড়ুন:
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির তুরস্ক সফর: স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর শান্তি আলোচনার উদ্যোগ
জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে গাজা যুদ্ধবিরতি ও স্থিতিশীলতা বাহিনী মোতায়েন সংক্রান্ত মার্কিন প্রস্তাব পাস
ফ্রান্স ও ইউক্রেনের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সামরিক সহায়তা চুক্তি স্বাক্ষর: রাফালে ও স্যাম্প/টি সরবরাহ অন্তর্ভুক্ত
আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?
আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।
