জাপানের হায়াবুসা২ মহাকাশযানের মাধ্যমে অ্যাস্টেরয়েড রিউগু থেকে সংগৃহীত নমুনা বিশ্লেষণের পর বিজ্ঞানীরা এক যুগান্তকারী তথ্য উন্মোচন করেছেন। এই গবেষণায় দেখা গেছে যে, রিউগুর মূল গ্রহাণুটি তার সৃষ্টির এক বিলিয়ন বছরেরও বেশি সময় পরেও জলীয় প্রবাহের সাক্ষী ছিল। এই আবিষ্কার সৌরজগতের প্রাথমিক পর্যায়ে জলীয় কার্যকলাপের প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে।
টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণাটি নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁরা লিউটিয়াম (Lu) এবং হাফনিয়াম (Hf) আইসোটোপ বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই জলীয় প্রবাহের ঘটনাটির সময়কাল নির্ণয় করেছেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে, রিউগুর মূল গ্রহাণুতে একটি বড় ধরনের সংঘর্ষের ফলে সৃষ্ট ফাটল দিয়ে বরফ গলে তরল জল প্রবাহিত হয়েছিল। এই দীর্ঘস্থায়ী জলীয় উপস্থিতি ইঙ্গিত দেয় যে, রিউগুর মতো অন্যান্য গ্রহাণুও দীর্ঘ সময় ধরে পৃথিবীতে জল সরবরাহ করে থাকতে পারে, যা পৃথিবীর প্রাথমিক মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলের গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
পূর্বে ধারণা করা হতো যে, সৌরজগতের জলীয় কার্যকলাপ কেবলমাত্র এর প্রাথমিক পর্যায়েই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু রিউগুর নমুনাগুলি এই ধারণাকে বদলে দিয়েছে। জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (JAXA)-এর হায়াবুসা২ মিশনটি ২০২০ সালে রিউগু থেকে নমুনা ফিরিয়ে এনেছিল। এই নমুনাগুলি আদিম গ্রহাণুগুলির গঠন ও ইতিহাস সম্পর্কে মূল্যবান অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করেছে, যা সৌরজগতের প্রাথমিক পর্যায় সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করেছে।
এই গবেষণাটি সৌরজগতের জলীয় ইতিহাস এবং পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশে এর ভূমিকা বোঝার জন্য গ্রহাণু নমুনা-প্রত্যাবর্তন মিশনের গুরুত্বকে তুলে ধরে। এটি আমাদের গ্রহের জলীয় ব্যবস্থার উৎস সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে। বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, এই ধরনের জলীয় সমৃদ্ধ গ্রহাণুগুলি পৃথিবীর প্রাথমিক অবস্থায় প্রত্যাশার চেয়ে দুই থেকে তিনগুণ বেশি জল সরবরাহ করতে পারত, যা পৃথিবীর মহাসাগর ও বায়ুমণ্ডলের বিবর্তনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।