বৃহস্পতির বরফময় উপগ্রহ ইউরোপা-র রহস্য উন্মোচনে নাসার ইউরোপা ক্লিপার মহাকাশযান ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবর তার যাত্রা শুরু করেছে। এই অভিযানের মূল লক্ষ্য হলো ইউরোপার বরফের পুরু আস্তরণের নিচে লুকানো বিশাল জলীয় মহাসাগর এবং সেখানে প্রাণের অস্তিত্বের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখা। ইউরোপা ক্লিপার মহাকাশযানটি ২০২৫ সালের ১ মার্চ মঙ্গল গ্রহের পাশ দিয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্র্যাভিটি অ্যাসিস্ট (gravity assist) বা মহাকর্ষীয় সহায়তা গ্রহণ করবে। এই কৌশলটি মহাকাশযানটির গতিপথকে আরও সুনির্দিষ্ট করবে এবং বৃহস্পতির দিকে এর যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে। মঙ্গল গ্রহের এই ফ্লাইবাই চলাকালীন, মহাকাশযানটির REASON (Radar for Europa Assessment and Sounding: Ocean to Near-surface) যন্ত্রটি পরীক্ষা করা হবে। এই অত্যাধুনিক রাডার ইউরোপার বরফের স্তর ভেদ করে এর গভীরে জলীয় ভাণ্ডার এবং প্রাণের জন্য উপযুক্ত পরিবেশের সন্ধান করবে।
ইউরোপা ক্লিপার ২০৩০ সালের এপ্রিল মাসে বৃহস্পতি গ্রহে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই দীর্ঘ যাত্রাপথে এটি ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে পৃথিবীর কাছ থেকেও একবার গ্র্যাভিটি অ্যাসিস্ট গ্রহণ করবে। বৃহস্পতি গ্রহে পৌঁছানোর পর, ইউরোপা ক্লিপার ইউরোপার প্রায় ৪৯ বার কাছ দিয়ে উড়ে যাবে। এই সময়কালে, মহাকাশযানটি তার নয়টি অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক যন্ত্র ব্যবহার করে ইউরোপার পৃষ্ঠের গঠন, এর বরফের নিচে থাকা মহাসাগর এবং প্রাণের বিকাশের জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানগুলির বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করবে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ইউরোপার বরফের নিচে থাকা মহাসাগরে পৃথিবীর মহাসাগরের চেয়েও দ্বিগুণ জল রয়েছে। এই জল, প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান এবং শক্তি—এই তিনটি মূল উপাদানই প্রাণের অস্তিত্বের জন্য অপরিহার্য। যদিও ইউরোপা ক্লিপার সরাসরি জীবন খুঁজে বের করার জন্য তৈরি হয়নি, তবে এটি ইউরোপার পরিবেশ প্রাণের জন্য কতটা উপযুক্ত, সেই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তর দেবে। এই অভিযানের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্য সৌরজগতে প্রাণের সন্ধানকে এক নতুন দিগন্তের দিকে নিয়ে যাবে।