মহাকাশ অনুসন্ধানের নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে নাসা তার আর্টেমিস মিশনের জন্য নভোচারীদের বিশেষ প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের অংশ হিসেবে, নভোচারীরা কলোরাডো রকি পর্বতমালার দুর্গম অঞ্চলে হেলিকপ্টার চালনার মাধ্যমে চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের কঠিন পরিস্থিতি অনুকরণ করছেন। এপ্রিল ২০২৫-এ, নভোচারী রাজা চ্যারি এই হাই-অল্টিটিউড আর্মি এভিয়েশন ট্রেনিং সাইট (HAATS) প্রোগ্রামে অংশ নিয়েছিলেন, যা জিপসাম, কলোরাডোতে অবস্থিত।
এই প্রশিক্ষণটি চাঁদের জটিল পৃষ্ঠে অবতরণের চ্যালেঞ্জিং পরিবেশের একটি প্রতিচ্ছবি তৈরি করে, যেখানে নভোচারীদের সামরিক হেলিকপ্টার ব্যবহার করে রকি পর্বতমালার মধ্য দিয়ে উড়তে হয়, যা চাঁদের অবতরণ পরিবেশের সঙ্গে অনেকটাই সাদৃশ্যপূর্ণ। HAATS প্রোগ্রামটি নাসা এবং ইউ.এস. আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের একটি যৌথ উদ্যোগ। এর মূল উদ্দেশ্য হলো নভোচারীদের চাঁদের পৃষ্ঠে অবতরণের সময়কার বিভ্রান্তিকর অসুবিধাগুলোর জন্য প্রস্তুত করা। চাঁদের পৃষ্ঠে গভীর গর্ত, খাড়া ঢাল এবং প্রতিকূল আলোর মতো বিষয়গুলো নেভিগেশনকে অত্যন্ত কঠিন করে তোলে।
রকি পর্বতমালার ৬,৫০০ থেকে ১৪,২০০ ফুট উচ্চতার মধ্যে হেলিকপ্টারগুলোর কর্মক্ষমতা তাদের সর্বোচ্চ সীমায় থাকে, যা পাইলটদের কাছ থেকে নির্ভুল নিয়ন্ত্রণ এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা দাবি করে। এই প্রশিক্ষণের সময় তুষার, ঝলকানি এবং ধুলো-সদৃশ হোয়াইটআউট-এর মতো প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলো পাইলট এবং নভোচারীদের যন্ত্রপাতির উপর নির্ভর করতে, দলবদ্ধভাবে কাজ করতে এবং কার্যকর যোগাযোগ বজায় রাখতে উৎসাহিত করে। এই দক্ষতাগুলি চাঁদের দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি সফল অবতরণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২০২১ সাল থেকে, মোট ২২ জন নাসা নভোচারী এবং একজন ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা (ESA) নভোচারী HAATS প্রোগ্রাম সম্পন্ন করেছেন। বব হাইনস এবং রাজা চ্যারির মতো নভোচারীরা কম দৃশ্যমানতার মধ্যে অবতরণ এবং ককপিটের মধ্যে যোগাযোগ উন্নত করার অনুশীলন করেছেন। আর্টেমিস III মিশন, যা চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নভোচারী অবতরণের পরিকল্পনা করছে, বর্তমানে ২০২৭ সালের মাঝামাঝি সময়ে নির্ধারিত আছে। এই মিশন পর্যন্ত, কলোরাডো রকি পর্বতমালার রুক্ষ ভূখণ্ড নভোচারীদের জন্য একটি অত্যাবশ্যকীয় প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসেবে কাজ করে যাবে। এটি চাঁদের মিশনের অবতরণ পর্বের জন্য নভোচারীদের প্রস্তুত করে তোলে।
এই প্রশিক্ষণ নাসার আর্টেমিস প্রস্তুতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা ফুল-মোশন সিমুলেটর এবং ডেডিকেটেড লুনার ল্যান্ডার মক-আপের মতো অন্যান্য প্রস্তুতি পদ্ধতির পরিপূরক। নাসা এবং ইউ.এস. আর্মি ন্যাশনাল গার্ডের মধ্যে এই অংশীদারিত্ব মহাকাশ অনুসন্ধানে যৌথ প্রচেষ্টার গুরুত্ব তুলে ধরে। সামরিক প্রশিক্ষকদের দক্ষতা এবং কলোরাডোর অনন্য ভূখণ্ড ব্যবহার করে, নাসা তার প্রশিক্ষণ কর্মসূচি উন্নত করছে, যা ভবিষ্যতের চন্দ্রাভিযানের নিরাপত্তা এবং সাফল্য নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নভোচারীরা চাঁদের পৃষ্ঠের মতো কঠিন পরিস্থিতিতেও আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ করতে সক্ষম হবেন, যা মহাকাশ অনুসন্ধানের ইতিহাসে এক নতুন মাইলফলক স্থাপন করবে।