জাপান তার প্রথম বাণিজ্যিক-পর্যায়ের ভাসমান বায়ু খামার চালু করেছে, যা নাগাসাকি প্রিফেকচারের গোতো সিটির উপকূল থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এই প্রকল্পটি জাপানের নবায়নযোগ্য শক্তি অর্জনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
এই অত্যাধুনিক বায়ু খামারটিতে আটটি ২.১ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন স্থাপন করা হয়েছে, যা বিশেষভাবে এই অঞ্চলের গভীর জল এবং ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড়ের মতো প্রতিকূল আবহাওয়ার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য ডিজাইন করা হয়েছে। যদিও প্রাথমিকভাবে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে এটি চালু হওয়ার কথা ছিল, তবে নির্মাণ পর্যায়ে ফ্লোটিং প্ল্যাটফর্মগুলিতে কিছু কাঠামোগত ত্রুটি ধরা পড়ায় প্রকল্পটি দুই বছরের জন্য বিলম্বিত হয়। এই ত্রুটিগুলি বর্তমানে সংশোধন করা হয়েছে এবং আশা করা হচ্ছে ২০২৬ সালের জানুয়ারি থেকে এটি পূর্ণ বাণিজ্যিক উৎপাদনে যাবে।
এই যুগান্তকারী উদ্যোগটি জাপানের শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলির একটি সম্মিলিত প্রচেষ্টা, যার মধ্যে রয়েছে তোদা কর্পোরেশন, এনিওস, ওসাকা গ্যাস, ইনপেক্স, কানসাই ইলেকট্রিক পাওয়ার এবং চুবু ইলেকট্রিক পাওয়ার। এই কনসোর্টিয়াম জাপানের ২০৫০ সালের মধ্যে কার্বন নিরপেক্ষতা অর্জনের উচ্চাভিলাষী লক্ষ্য পূরণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গোতো ভাসমান বায়ু খামারটি জাপানের গভীর উপকূলীয় জলের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী, যেখানে ঐতিহ্যবাহী স্থির-তলদেশী টারবাইন স্থাপন করা সম্ভব নয়। এই উদ্ভাবনী পদ্ধতি দেশের অন্যান্য অংশেও অফশোর বায়ু শক্তি উন্নয়নের পথ প্রশস্ত করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই টারবাইনগুলি ১৪০ মিটার গভীরতায় স্থাপন করা হয়েছে, যা জাপানের ভৌগলিক বৈশিষ্ট্য এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের (যেমন ভূমিকম্প ও টাইফুন) সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতার উপর জোর দেয়।
প্রকল্পটি কেবল জাপানের শক্তি সুরক্ষাই শক্তিশালী করবে না, বরং এটি স্থানীয় অর্থনীতিকেও নতুনভাবে উজ্জীবিত করবে। স্থানীয় মৎস্যজীবীরা বিদ্যুৎ বিক্রির রাজস্বের একটি অংশ এবং প্রকল্পের মাধ্যমে উৎপন্ন সম্পত্তির করের ভাগ পাচ্ছেন। এছাড়াও, কিছু মৎস্যজীবীকে নির্মাণ সাইট পর্যবেক্ষণের কাজেও নিয়োগ করা হয়েছে, যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে প্রকল্পের সহাবস্থান নিশ্চিত করে।
প্রকল্পের বিলম্বের কারণ হিসেবে কাঠামোগত ত্রুটিগুলি চিহ্নিত করা হলেও, তোদা কর্পোরেশন এই সমস্যা সমাধানে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছে এবং প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের প্রকল্পগুলির জন্য মূল্যবান শিক্ষা হিসেবে কাজ করবে। যদিও প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি এবং পরিকাঠামোগত ঘাটতির মতো কিছু চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান, তবে জাপানের বিশাল উপকূলীয় অঞ্চল এবং উন্নত সামুদ্রিক প্রকৌশল ক্ষমতা ভাসমান বায়ু শক্তির বিকাশের জন্য একটি শক্তিশালী ভিত্তি প্রদান করে।
জাপান সরকার ২০৪০ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য শক্তিকে দেশের প্রধান বিদ্যুৎ উৎস হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে এবং অফশোর বায়ু শক্তিকে এই লক্ষ্যের একটি 'ট্রাম্প কার্ড' হিসেবে দেখছে। গোতো ভাসমান বায়ু খামার এই বৃহত্তর কৌশলের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা জাপানের শক্তি খাতে একটি টেকসই এবং সবুজ ভবিষ্যতের দিকে যাত্রাকে ত্বরান্বিত করবে।