ITER-এ চীনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরবরাহ, ফিউশন শক্তির পথে এক নতুন মাইলফলক

সম্পাদনা করেছেন: an_lymons

আন্তর্জাতিক থার্মোনিউক্লিয়ার এক্সপেরিমেন্টাল রিঅ্যাক্টর (ITER) প্রকল্পে চীনের কাছ থেকে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশ সরবরাহ করা হয়েছে, যা পারমাণবিক ফিউশন শক্তি উৎপাদনের পথে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এই বিশাল ম্যাগনেটিক পাওয়ার সাপ্লাই সিস্টেম, যা কারেকশন কয়েল ফিডার নামে পরিচিত, টোকামাকের কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। টোকামাক হলো একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র যা পারমাণবিক ফিউশন প্রক্রিয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্লাজমাকে আবদ্ধ রাখতে ব্যবহৃত হয়।

এই সরবরাহকৃত যন্ত্রাংশটি প্রায় ১৫ মিটার ব্যাস এবং প্রায় ১৬০০ টন ওজনের, যা এর প্রকৌশলগত উৎকর্ষতা এবং লজিস্টিকস-এর এক বিশাল নিদর্শন। এটি চুল্লির শক্তিশালী চুম্বকগুলির বিদ্যুৎ সরবরাহ ও শীতলীকরণ প্রক্রিয়া পরিচালনা করার পাশাপাশি, সঞ্চিত চৌম্বকীয় শক্তি নিরাপদে নির্গত করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবেও কাজ করে। চীনের এই যন্ত্রাংশ সরবরাহ ITER প্রকল্পের আন্তর্জাতিক সহযোগিতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

ITER বিশ্বের অন্যতম উচ্চাভিলাষী বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ, যেখানে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, জাপান, ভারত এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো সাতটি প্রধান আন্তর্জাতিক অংশীদার তাদের জ্ঞান ও সম্পদ একত্রিত করেছে। এই সম্মিলিত প্রচেষ্টা সূর্যের মতো শক্তি উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে পৃথিবীতে পুনরুত্পাদন করার লক্ষ্য রাখে, যা একটি পরিচ্ছন্ন ও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে আমাদের চালিত করবে। পারমাণবিক ফিউশন প্রক্রিয়া দীর্ঘস্থায়ী তেজস্ক্রিয় বর্জ্য এবং কার্বন ডাই অক্সাইড (CO2) নিঃসরণ প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনে, যা বর্তমান শক্তি উৎপাদন পদ্ধতির একটি শক্তিশালী বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

চীনের ইন্সটিটিউট অফ প্লাজমা ফিজিক্স (ASIPP) কর্তৃক দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিবিড় গবেষণা ও উদ্ভাবনের ফলস্বরূপ এই অত্যাধুনিক ম্যাগনেটিক ফিডার সিস্টেমটি তৈরি করা হয়েছে। এই সিস্টেমটি ৩১টি সেটের সমন্বয়ে গঠিত, যার মোট ওজন প্রায় ১৬০০ টন। বিশেষত, কারেকশন কয়েল ইন-ক্রায়োস্ট্যাট ফিডারগুলি অতি-নিম্ন প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং উচ্চ অন্তরকতার জন্য অত্যন্ত কঠোর নির্ভুলতার মান পূরণ করে। চীনের এই উল্লেখযোগ্য অবদান কেবল তাদের উন্নত প্রযুক্তিগত দক্ষতাই প্রদর্শন করে না, বরং ফিউশন শক্তিকে বিশ্বব্যাপী পরিচিত করার এই অভিন্ন লক্ষ্যের প্রতি তাদের গভীর অঙ্গীকারও তুলে ধরে।

তবে, ফিউশন শক্তি অর্জনের পথটি বৈজ্ঞানিক, প্রকৌশলগত এবং আর্থিক চ্যালেঞ্জে পরিপূর্ণ। ITER প্রকল্পের মোট ব্যয় এখন ২৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। উপরন্তু, প্রকল্পের সময়সূচীতেও কিছু পরিবর্তন এসেছে; যদিও পূর্বে প্রথম প্লাজমা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২০২৫ সাল নির্ধারণ করা হয়েছিল, একটি সংশোধিত রোডম্যাপ অনুযায়ী ২০৩৫ সালে প্রাথমিক গবেষণা কার্যক্রম শুরু হবে, যার মধ্যে ডিউটেরিয়াম-ডিউটেরিয়াম ফিউশন কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে। ২০৩৬ সালে পূর্ণ ম্যাগনেটিক শক্তি এবং প্লাজমা কারেন্ট অপারেশন এবং ২০৩৯ সালের মধ্যে ডিউটেরিয়াম-ট্রিটিয়াম অপারেশন সম্পন্ন হওয়ার আশা করা হচ্ছে।

চীনের কাছ থেকে এই অত্যাবশ্যকীয় যন্ত্রাংশটির সরবরাহ ITER প্রকল্পে যুক্ত হওয়া কেবল একটি লজিস্টিক সাফল্য নয়, বরং এটি মানবজাতির উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং একটি উজ্জ্বল, পরিচ্ছন্ন শক্তি ভবিষ্যতের সম্মিলিত আকাঙ্ক্ষার এক শক্তিশালী প্রতীক। এই মহৎ সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টায় সম্মুখীন হওয়া প্রতিটি চ্যালেঞ্জই আমাদের জ্ঞান বৃদ্ধি করে এবং বিশ্বব্যাপী শক্তির চাহিদা মেটাতে একটি ঐক্যবদ্ধ পদ্ধতির জন্ম দেয়। এই জটিল সিস্টেমগুলির সুনির্দিষ্ট সংযোজন ও একীকরণ কেবল একটি নির্মাণ প্রকল্পের অংশ নয়, বরং এটি এমন একটি ভবিষ্যৎ নির্মাণের ভিত্তি স্থাপন করছে যেখানে নক্ষত্রদের শক্তি মানবজাতির কল্যাণে টেকসইভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে। এই মাইলফলকটি বিশ্বব্যাপী বৈজ্ঞানিক উদ্যোগগুলির আন্তঃসংযোগ এবং যখন জাতিগুলি একটি সাধারণ, রূপান্তরমূলক উদ্দেশ্যের জন্য একত্রিত হয় তখন যে গভীর সম্ভাবনা তৈরি হয় তা আরও একবার নিশ্চিত করে।

উৎসসমূহ

  • Visegrad Post

  • AS

আপনি কি কোনো ত্রুটি বা অসঠিকতা খুঁজে পেয়েছেন?

আমরা আপনার মন্তব্য যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিবেচনা করব।