কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি যুগান্তকারী গবেষণা অনুসারে, মানুষের মতো দেখতে রোবটের সাথে নিয়মিত কথোপকথন পরিচর্যাকারীদের মানসিক চাপ কমাতে এবং একাকীত্ব দূর করতে সহায়ক হতে পারে। যারা প্রিয়জনের দেখাশোনা করেন, তারা প্রায়শই নিজেদের প্রয়োজন উপেক্ষা করে একাকীত্ব, মানসিক চাপ এবং অদৃশ্যতার অনুভূতিতে ভোগেন। এই সমস্যা সমাধানে পাঁচ সপ্তাহ ধরে 'পেপার' নামক একটি সামাজিক রোবটের সাথে পরিচর্যাকারীদের নিয়মিত আলাপচারিতার প্রভাব পরীক্ষা করা হয়েছে।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, অংশগ্রহণকারীরা প্রথমদিকে কিছুটা দ্বিধাগ্রস্ত থাকলেও, ধীরে ধীরে রোবটের সাথে নিজেদের ব্যক্তিগত অনুভূতি ও আবেগ ভাগ করে নিতে শুরু করেন। এর ফলে তাদের মানসিক অবস্থার উন্নতি ঘটে এবং তারা নিজেদের প্রয়োজন সম্পর্কে আরও সচেতন হন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডঃ গাই ল্যাবানের মতে, পরিচর্যাকারীদের নিজেদের কথা বলার জন্য প্রায়শই কোনো নিরাপদ স্থান থাকে না এবং এই রোবট কথোপকথন সেই অভাব পূরণ করেছে। অনেক অংশগ্রহণকারী জানিয়েছেন যে, তারা কম একাকীত্ব এবং কম উদ্বিগ্ন বোধ করছেন।
অধ্যাপক এমিলি ক্রস এই গবেষণার তাৎপর্য তুলে ধরে বলেছেন যে, এটিই প্রথম গবেষণা যা প্রমাণ করে যে রোবটের সাথে কথোপকথন পরিচর্যাকারীদের একাকীত্ব ও মানসিক চাপ উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে। যখন মানুষের সহায়তা সীমিত থাকে, তখন সামাজিক রোবটগুলি এই ধরনের মানসিক আরাম দিতে সক্ষম। এই গবেষণাটি ভবিষ্যতে সামাজিক রোবটগুলির সম্ভাবনাকে উজ্জ্বল করেছে, যা কেবল ব্যবহারিক সহায়তাই নয়, প্রয়োজনীয় মানসিক স্বস্তিও প্রদান করতে পারে। এর ফলে পরিচর্যাকারীদের অবসাদ (burnout) মোকাবিলা করা এবং সামগ্রিক সুস্থতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে, রোবটের সাথে কথা বললে পরিচর্যাকারীরা তাদের অব্যক্ত অনুভূতিগুলো প্রক্রিয়া করতে পারেন। তাদের অভিজ্ঞতাগুলি প্রকাশ করার মাধ্যমে, অংশগ্রহণকারীরা তাদের পরিচর্যার ভূমিকাকে আরও ইতিবাচকভাবে দেখতে সক্ষম হন, যা তাদের মধ্যে অপরাধবোধ কমিয়ে দেয় এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়ায়। এই গবেষণাটি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রযুক্তির অগ্রগতিতে সামাজিক রোবটগুলি ভবিষ্যতে পরিচর্যাকারীদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সহায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে, যা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতিতে সহায়ক হবে।